পুলিশ সুপার মইনুলের জন্য কাঁদছেন সাধারণ মানুষ
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মইনুল হাসানকে ভালোবাসা ও চোখের জলে বিদায় জানালেন সহকর্মী এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এবং বগা লঞ্চঘাটে এসপি মইনুল হাসানের জন্য কাঁদতে দেখা যায় সহকর্মীদের। এ সময় সাধারণ মানুষও আবেগাপ্লুত হন। পাশাপাশি লঞ্চঘাটে এক নারী ভিক্ষুককে কাঁদতে দেখা যায়। সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নেন এসপি মইনুল হাসান।
সম্প্রতি এসপি মইনুল হাসানকে পটুয়াখালী থেকে বদলি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার করা হয়। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী ছেড়ে ঢাকার কর্মস্থলে আসেন। এদিন পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এবং বগা লঞ্চঘাটে তাকে বিদায় জানাতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ।
এ নিয়ে শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন এসপি মইনুল হাসান। পরে তার স্ট্যাটাসটি অনেকেই শেয়ার করে অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানান।
‘এ ঋণ শোধ করার সাধ্য নেই আমার’ শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসপি মইনুল হাসান লিখেছেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট। বাংলো থেকে গাড়িতে তিন মিনিটের পথ। পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনালের মূল ফটক থেকে সারি সারি জনতা। তাদের দেখে পাশে বসে থাকা স্ত্রী বলেই ফেললেন বিদায়বেলায় এরা কিছু নিতে আসেনি; দিতে এসেছে। অকৃত্রিম ভালোবাসা। মূল ফটকের আগেই গাড়ি থামাতে বাধ্য হলাম। বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থী এবং পুলিশ সদস্যরা ফুলের তোড়া এবং হাতে হাতে লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ অবস্থায় মা ও স্ত্রী-সন্তানকে দ্বিতীয় ফটক দিয়ে লঞ্চে তুলতে বাধ্য হলাম। একি সুখস্মৃতি। ভিআইপি কক্ষে প্রবেশের মুখেও একই অবস্থা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে লঞ্চের সাইরেন। লোহালিয়া নদী বেয়ে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট যাত্রা করে চরগরবদি লঞ্চঘাটে এলাম। দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের চরগরবদি গ্রামে লঞ্চঘাটটি অবস্থিত। পথিমধ্যে আর কোনো ঘাট কিংবা যাত্রাবিরতি নেই। লঞ্চঘাটে ভিড়তেই অভূতপূর্ব দৃশ্য। পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা ও সর্বস্তরের জনতা শেষবারের মতো এসপিকে দেখতে ছুটে এসেছেন। লঞ্চ থেকে নেমে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সৌভাগ্য আমাকে চিরঋণী করে রাখবে। সিক্ত হলাম তাদের ভালোবাসায়।’
‘আবারও বলছি, আমি আপনাদেরই ছিলাম, আছি, থাকব। ভালো থাকুন সম্মানিত পটুয়াখালীবাসী, ভালো থাকুক টিম পটুয়াখালী পুলিশ’ লিখে স্ট্যাটাস শেষ করেন এসপি মইনুল হাসান।
পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের ভিক্ষুক সালমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসপি স্যার পটুয়াখালী থেকে চলে যাচ্ছেন। খুব কষ্ট লাগছে তার জন্য। করোনা পরিস্থিতিতে লঞ্চঘাটে এসে অনেকদিন আমাকে খাবার দিয়েছেন, শীতবস্ত্র দিয়েছেন। তার মতো আর কেউ আমার খোঁজ নেবে না।
পুলিশ সদস্য হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসপি মইনুল হাসান স্যারের সঙ্গে ৩৮ মাস পটুয়াখালীতে চাকরি করার সৌভাগ্য হয়। স্যারের মতো ভালো পুলিশ অফিসার ৩৫ বছরেও পাইনি। স্যার ছিলেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ এবং পটুয়াখালীর সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসার ব্যক্তি। সাধারণ মানুষের অনেক উপকার করেছেন। এজন্যই স্যারের বিদায়ে কেঁদেছেন হাজার হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন: প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সদস্য সোহাগ
আরও পড়ুন: মন জয় করা এক ওসির গল্প
মহিব্বুল্লাহ চৌধুরী/এএম