আমাদের আন্দোলন গোটা জাতিকে রক্ষার আন্দোলন : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বর্গীদের মতো আচরণ করছে। আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, গেট ব্যাক বাংলাদেশ। আমাদের এই আন্দোলন শুধু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মুক্তির জন্য নয়। এই আন্দোলন গোটা জাতিকে রক্ষার আন্দোলন।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে তার সাক্ষী জনগণ। সরকারের দুটি হাতিয়ার- হামলা আর মামলা। এই সরকার হামলা করবে আর যাদের ওপর হামলা চালাবে তাদেরকেই মামলায় ফাঁসাবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পুলিশের গুলিতে নিহত আব্দুর রহিম আর নূরে আলমের স্বজনরা এখানে এসেছিলেন। তাদের অসহায় আহাজারি দেশবাসী শুনেছেন। তাদের অসহায় আহাজারি আপনারা শুনছেন। নূরে আলম ও রহিমের সন্তানরা এতিম হয়েছে। ওদের দিকে যখন তাকাই তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। মনে হয় আমাদের আন্দোলনের বলি এরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আজকে এই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন একটা মাত্র দাবিতে। সেই দাবিটি আপনাদের অধিকারকে ফিরে পাওয়ার দাবি। আপনাদের দাবিয়ে রাখা যায়নি। আটকে রাখা যায়নি এই সমাবেশে আসার জন্য। টানটা কোথায়? আমার অধিকারের টান, কলিজার টান, অধিকারের টান। যেই অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। আর আওয়ামী লীগ কি করেছে? সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের সমস্ত আশা আকাঙক্ষাকে চুরমার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বপ্ন ছিলো আমাদের গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র, একটি মুক্ত চিন্তার দেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসে। সংবিধানেও তাই ছিলো। কিন্তু এরা কি করেছিল? ১৯৭৫ সালে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল। আবার এখন এই ১৫ বছর ধরে সেই একই স্বপ্ন তারা দেখছে এবং তারা কাজ করছে একইভাবে। তারা এখানে একটা এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। কিন্তু একটা খোলস রাখতে চায় গণতন্ত্রের। ১৪ বছর ধরে এরা বাংলাদেশের ওপর এতো অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে তার স্বাক্ষী আপনারাই। আপনাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা হয়েছে। হামলা হয়েছে। হামলা আর মামলা এই দুটা হচ্ছে তাদের জন্য বড় অস্ত্র। হামলা করবে, আবার যাদের ওপর হামলা করবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের দেশের আলেম-ওলামারাও রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে। কেউই নিরাপদ নয়। তারা সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বলছে বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। তো তখন মনে ছিলো না, যখন টাকাগুলো চুরি করে পাচার করেছিলেন। বিদেশে পাঠাচ্ছিলেন। কানাডা, মালয়েশিয়া, ইউরোপে বাড়ি বানাচ্ছিলেন, তখন মনে ছিলো না। আমাদের নেতা হিসাব দিয়েছেন, কত টাকা পাচার করেছেন কতভাবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ দিয়ে খুব ঢাকঢোল পিটিয়েছে সরকার। ঢাকার হাতিরঝিলে আতশবাজি ফুটল, যেন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে।। সেই বিদ্যুৎ এখন নাই। আজকে সকালে আমি হোটেলে ছিলাম। দেখলাম কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ এলো গেল। এরা এই বিদ্যুতে চুরি করেছে। হাজার হাজার টাকা চুরি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছে। একটা জায়গা নেই, একটা জায়গা খুঁজে পাবেন না, যেখানে তারা চুরি করে নাই।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৮ সালে মাথায় হিজাব দিয়ে এসে বলেছিল আমি ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবো। কত টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে এখন? ঘরে ঘরে চাকরি দিবে বলেছিল। দিয়েছে, আওয়ামী লীগের ছেলেদের। কিন্তু প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিয়েছে। আর বলেছিল বিনা পায়সায় সার দেবো। সেই সারের এখন দাম আমাদের সময় যা ছিল তার থেকে তিনগুণ বেশি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একবার ভোট চুরি করে নাই। ওরা যখনই আসে তখনই চুরি করে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দুটি জিনিস আছে, একটা হলো চুরি আরেকটা হলো সন্ত্রাসী। ১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ১৮ সালে ভোট চুরি করেছে, এখন আবার একটা ভোট চুরির নতুন করে নির্বাচন দিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। নতুন নির্বাচন কমিশন তাদেরকে দিয়ে এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করতেছে যে নির্বাচন একেবারে নিরাপেক্ষ হবে। এসব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আগে পদত্যাগ করতে হবে তাকে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং সংসদ বিলুপ্ত করে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশন নতুন করে নির্বাচন করবে। নির্বাচন করে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সরকারে ছিলাম। বরিশালে বিভাগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এই সরকার দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। এখানে উন্নয়ন উন্নয়ন আর উন্নয়ন, উন্নয়ন ছাড়া কিছু দেখায় না চারদিকে। সেই উন্নয়নের অবস্থা এমন যে বাংলাদেশে শতকরা ৪২ জন লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আজকে বাজারে যাওয়া যায় না। বাজারে গেলে হাত দেওয়া যায় না কোনো জিনিসের ওপরে। আমাদের কোনো বিকল্প নাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দেশের মানুষ আর কোনো কিছু শুনতে চায় না। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, সেই কথা আমরা আবার বলতে চাই- ‘গেট ব্যাক, গেট ব্যাক বাংলাদেশ।’ রাজপথে ফয়সালা করে আমরা দেশকে ফিরিয়ে আনবো। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি, আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই বলেই আজকের এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম ডা. জাহিদ হাসান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল প্রমুখ।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর