কফি চাষে সফলতার ছোঁয়া পাচ্ছেন পাহাড়ের কৃষকরা
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বের সবার কাছেই পানীয় হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। কফি সাধারণত পশ্চিমা দেশের অন্যতম পানীয়। বাংলাদেশেও এর বিস্তার শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কৃষি গবেষণায় পরীক্ষামূলক কফি চাষ শুরুর পর নতুন করে জেলার ১০টি বাগানে ১০ হাজার চারা লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার ছোঁয়া পাচ্ছেন পাহাড়ের কৃষকরা।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কফি চাষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কফিও এদেশকে এনে দিতে পারে রফতানি খাতে আর্থিক সাফল্য ও বৈদেশিক মুদ্রা।
কৃষি গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের দিকে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে কফি চাষ শুরু হয়, যা ইতিমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে। কফি চাষ সম্প্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কৃষিবিদদের মতে, কফিগাছ দেখতে অনেকটা বেলি ফুলগাছের মতো। তবে তার উচ্চতা কম হলেও ঘেরের দিক থেকে অনেকটা বড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট ওপরে যেকোনো মাটিতে কফি চাষ করা সম্ভব। তবে পাহাড়ি উপত্যকা ও ঝরনার পাশের জমি এবং যেসব জমিতে লবণাক্ততা নেই, সেসব জমি কফি চাষের উপযোগী।
চারা রোপণের চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে কফির ফল-গোটা সংগ্রহ করা যাবে। কফির গোটাগুলো দেখতে অনেকটা গমের মতো। তবে তা আকারে একটু বড়। একটি গাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের জন্য খরচ হয় মাত্র এক থেকে দেড় শ টাকা। একটি গাছ থেকে বছরে আধা কেজির বেশি কফির শুকনো ফল পাওয়া যায়।
কফিগাছ থেকে শুধু পানীয়ই নয়। অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে মধু ও শ্যাম্পু তৈরি করা যাবে। একটি কফিগাছের ফুল থেকে প্রতিবারে ১০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ওই গাছের উপকরণকে প্রক্রিয়া করে উন্নত মানের ‘শ্যাম্পু’ তৈরি করা যাবে।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কফি প্রক্রিয়াজাতকারী মো. জামাল হোসেন জানান, কফি-বাগান করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। গাছ থেকে কফি সংগ্রহ করে খুব কম সময়ে কফির বিনগুলো শুকিয়ে গুঁড়া করে তাৎক্ষণিক কফি তৈরি হয়ে যায়। ‘অ্যারাবিয়ান’ জাতের এ কফি বাজারের প্যাকেটজাত সাধারণ কফির চেয়ে বহুগুণ সুস্বাদু। বাজারজাত করলে এটি অনেক লাভজনক হবে বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী আব্দুর রশিদ বলেন, ২০০১ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এখানে আমরা কফি চাষ শুরু করি। বর্তমানে জেলার ১০টি বাগানে নতুন করে ১০ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। কফি চাষের জন্য পাহাড়ি অঞ্চল খুবই উপযোগী। কম খরচ ও পরিশ্রমে একটি বাগান থেকে দীর্ঘদিন ধরে কফি উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের দুই একর পাহাড়ি টিলাভূমিতে ৪৫০টি গাছে কফি ধরেছে, যা ইতোমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মর্তুজ আলী জানান, কম সময়ে কফি চাষে ফলন পাওয়া যায় বলে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কফি চাষে সচ্ছলতা ফিরে আসবে পাহাড়ি জীবনে।
আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে খাগড়াছড়িতে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট গবেষক ও কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে কৃষি পর্যায়ে কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তুলতে পারলে এটি ভবিষ্যতে দেশের অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে।
এনএ