প্রবাস থেকে ফিরে এসে খেজুর বাগানে সফল জীবন আলী
পরিশ্রম ও সাধনায় যেকোনো কর্মে সফল হওয়া যায়, তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাজিরগাঁও এলাকার জীবন আলী (৫০)। পরিবারের সচ্ছলতা আনতে চাকরির সুবাদে জীবনের অনেকটা সময় দেশের বাইরে কাটিয়েছেন তিনি। ১৩ বছর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে চাকরি করলেও ভাগ্য তার সহায় হয়নি।
২০১৪ সালের শেষ দিকে দেশে ফেরার সময় সৌদি আরব থেকে আনা বিভিন্ন প্রজাতির দেড় হাজার খেজুরের বীজ নিজ বাড়ির পাশে ১৫ শতাংশ জমিতে বালু ভরাট করে ‘আল-মদিনা খেজুর বৃক্ষ’ নামের একটি নার্সারিতে প্রথম বীজ রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যা শুরু করেন।
উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও ঈদগা ময়দানের চারপাশে ১২টি ও স্থানীয় কবরস্থানের চারপাশে কয়েকটি খেজুরগাছ লাগিয়ে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে থাকেন। এবারই প্রথম তার খেজুরগাছে ফল আসতে শুরু করে। জীবন আলীর খেজুরগাছে খেজুর দেখে স্থানীয় এলাকাবাসীও অনেক খুশি। বর্তমানে আল-মদিনা খেজুর বৃক্ষ নার্সারিতে আল মরিয়ম, আল সাফা, আল খুদরি, আল তুহুরি, ডেকলেট নুর, সুক্কারি ও ছাগাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দেড় হাজার খেজুরের চারা রয়েছে।
২০১৯ সালে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ফলদ ও বৃক্ষ মেলায় প্রথম ২০০টি খেজুরগাছ বিক্রি করেছেন তিনি। প্রকারভেদে এক-একটি খেজুরগাছ দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।
সরেজমিন কাজিরগাঁও এলাকায় আল-মদিনা নার্সারিতে দেখা যায়, জীবন আলীর নার্সারিতে খেজুরগাছের পাশাপাশি বিদেশি টাং ফল, রামবোতান, ডুরিয়ান, কাঠ লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। জীবন আলীর জীবনের একমাত্র সাধনা তার এই নার্সারি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেজুরগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
এবারই প্রথম নিজের খেজুরগাছে ফল আসায় তার আনন্দের যেন শেষ নেই। বিদেশি খেজুরের ফলন দেখতে এলাকার মানুষের উৎসাহেরও কমতি নেই। দিন দিন তার খেজুরগাছের খবর এলাকায় বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। ফলে জীবন আলীর নার্সারিতে এখন প্রায় প্রতিদিনই দু-চারটি করে খেজুরের চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ায় জীবনসংসারে আশার আলো দেখছেন তিনি।
বিদেশি খেজুরগাছ রোপণ করার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে জীবন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশের মাটি খেজুরগাছের জন্য উপযোগী। চাষপ্রণালি জানা থাকলে আমাদের দেশেও বিদেশি খেজুরগাছ হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বালু মাটির সঙ্গে তিন প্রকারের সার মিশ্রণ করে পলিথিনের কাগজের পেকেটে একটি করে বীজ রোপণ করতে হয়। নিয়মিত পানি দিলে কয়েক দিনের মধ্যে দুটি করে পাতা গজিয়ে ওঠে। পরে এই চারা আলাদা করে সারিবদ্ধভাবে মাটির পাত্রে স্থানান্তর করতে হয়। স্থায়ীভাবে তিন ফুট গর্ত করে যেকোনো স্থানে এই চারা লাগালেই সঠিক পরিচর্যায় পাঁচ বছরের মধ্যে ফলন আসতে শুরু করবে। জীবন আলী আরও বলেন, খেজুরগাছ রোপণ করা যেমন সময়ের ব্যাপার, তেমনি খরচও অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নার্সারি শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন পর এ বছরই প্রথম সফলতার মুখ দেখেন। এ পর্যন্ত শতাধিক খেজুরের চারা বিক্রি করেছেন তিনি। নিজ এলাকার পাশাপাশি অন্য এলাকা থেকেও খেজুরের চারা নিতে আসতে শুরু করেছে মানুষ। সব চারা বিক্রি করতে পারলে আমার অনেক টাকা লাভ হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আল-মদিনা নার্সারি থেকে আরব দেশের খেজুরগাছ বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে সোনার বাংলাকে ধন্য করতাম, নিজেও ধন্য হতাম।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবন আলীর প্রতিভায় মানুষ সৌদি আরবের খেজুরগাছ রোপণ করতে আরও উৎসায়ী হবেন। গত বছর জীবন আলী উপজেলা মাঠে ফলদ ও বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছিলেন। খেজুরের ২০০টি চারা বিক্রিও করেছিলেন তিনি। জীবন আলীর এই উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। আমরা নিয়মিত তার নার্সারির খোঁজখবর নিচ্ছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এনএ