প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সদস্য সোহাগ
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে এক পুলিশ সদস্যকে ষাটোর্ধ্ব এক রিকশাওয়ালার সঙ্গে হাত উঁচিয়ে সালাম দিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। এরপর পকেট থেকে টাকা বের করে রিকশাওয়ালার হাতে দিয়েছেন ওই পুলিশ সদস্য।
ঘটনাটি নরসিংদী সদরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন জেলখানা মোড় এলাকার। গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সদস্য সোহাগ হোসেন (২৮)।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেলে নরসিংদী সদরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন জেলখানা মোড় এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন নরসিংদী পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল সোহাগ হোসেন। এ সময় পেছন থেকে তাকে ডাক দেন ষাটোর্ধ্ব এক রিকশাওয়ালা। তিনি সোহাগের কাছে খাওয়ার জন্য ২০ টাকা চান। একপর্যায়ে বেশ কিছু আলাপের পর সোহাগ টাকা দেন এবং একটি রেস্টুরেন্ট দেখিয়ে দেন। এই দৃশ্য রেকর্ড হয় পাশেই থাকা একটি হার্ডওয়্যারের দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেখান থেকে ভিডিও সংগ্রহ করে স্বপন শেখ নামে এক পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে এটি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজে ছড়িয়ে পড়ে।
রিকশাওয়ালার ভাষ্য, এক ব্যক্তি রিকশা ভাড়া নিয়ে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে পারিশ্রমিক না দিয়েই চলে গেছেন। ফলে তিনি খালি হাতে ফিরে আসেন। তার কাছে খাওয়ার টাকাও ছিল না।
ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করা শিক্ষার্থী স্বপন শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ ঘটনার সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী। বিকেলে আসরের নামাজে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্য সোহাগ ভাইকে এক রিকশাওয়ালাকে টাকা দিতে দেখি। বিষয়টা দেখে অবাক হই। নামাজ শেষে পুরো ঘটনা জানার পর আমার ফোনে কানেক্ট করা বড় ভাইয়ের হার্ডওয়্যারের দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার সফটওয়্যার থেকে ব্যাকআপ চেক করে ভিডিওটা ডাউনলোড করে ফেসবুকে পোস্ট করি। পরে আরও অনেকে একই ভিডিও ডাউনলোড করে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন। পুলিশের ভালো কাজ সকলের কাছে ছড়িয়ে দিতেই আমি ভিডিওটি পোস্ট করেছিলাম।
পুলিশ সদস্য সোহাগ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, তার জন্ম নারায়ণগঞ্জে। তিনি ২০১১ সালের আগস্টে পুলিশে যোগ দেন। গত এক বছর ধরে তিনি নরসিংদী পুলিশ লাইন্সে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো সময় ট্রাফিকের সংকট হলে অতিরিক্ত ফোর্স হিসেবে তিনি ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন।
সোহাগ হোসেন বলেন, আমার কাছে নাশতা খাওয়ার টাকা চান ওই রিকশাওয়ালা। লোকটাকে দেখে আমার মায়া লাগে, কথা বলার সুযোগ দেই। তারপর আমি তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করি। তার আগে আমি উনাকে হাত উঁচিয়ে সালাম দেই। এই বয়সেও তিনি নিজের কাজ নিজে করছেন দেখে নিজ থেকে তাকে সম্মান দিয়েছি।
তিনি বলেন, ২০১১ সালের আগস্টে পুলিশে যোগদানের পর থেকেই নিজেকে একজন সেবক হিসেবে মনে করি। মানুষের সেবা করতে চাই। আমাদের প্রতি মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সেগুলা দূর করতে চাই। পুলিশ শুধু আসামির পেছনে দৌঁড়ায় না, মানবিক কাজও করে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামুল হক সাগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। আমরা জনগণের জন্যই কাজ করি। আমাদের প্রতি অনেকের অনেক ভুল ধারণা কাজ করে। বিষয়গুলো পীড়াদায়ক। বিশেষ করে ট্রাফিকে যারা কাজ করেন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এ রকম মানবিক সদস্য আমাদের পুলিশের গর্ব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এক দল মানবিক পুলিশ সদস্য। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে জনগণের পাশে থাকছি। এটা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: পুলিশ সুপার মইনুলের জন্য কাঁদছেন সাধারণ মানুষ
রাকিবুল ইসলাম/আরএআর