ঐতিহ্য রক্ষায় পাহাড়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশবান্ধব মাচাং ঘর
প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বান্দরবানের গৃহহীনদের মাঝে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আর এসব মাচাং ঘর স্থানীয়দের নির্মাণশৈলী অনুসরণ করেই নির্মিত হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি ইউনিয়নে একটি মাচাং ঘর নির্মাণের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭০ টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ১৩৩টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৫৬০টি গৃহ নির্মাণের জন্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৬৮টি সেমি পাকা ঘর ভূমিহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩০টি মাচাং ঘরসহ ৫৯২টি গৃহ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চাহিদার ভিত্তিতে ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে এসব মাচাং ঘর নির্মাণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল বান্দরবান পরিদর্শন শেষে মাচাং ঘর নির্মাণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় এনে বিষয়টি অনুমোদন করেন।
ভূমিহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় বর্তমানে বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯টি, আলীকদম উপজেলায় ১টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৫টি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় ৪৫টি, লামা উপজেলায় ১৫টি, রুমা উপজেলায় ১০০টি এবং থানচি উপজেলায় ৪৫টি মাচাং ঘরের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, মাচাং ঘরের নিচে পশুপালনসহ অন্যান্য কাজ করা যায়। বড় আকারের খুঁটির ওপর নির্মিত এ মাচাং ঘর পরিবেশবান্ধব। এসব ঘর পাহাড়ি ঢালু যেকোনো জায়গায় নির্মাণ করা সম্ভব। তাছাড়া এটা নির্মাণ করতে পরিবেশের ক্ষতি করে পাহাড় কাটা লাগে না। তাই পাহাড়িদের জন্য সেমি পাকা ঘরের পরিবর্তে মাচাং ঘর নির্মাণ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
বান্দরবান সদর উপজেলার ৬ নম্বর জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যসিংশৈ মারমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাহাড়িদের কাছে মাচাং ঘরের অনেক চাহিদা রয়েছে। এর মাধ্যমে পাহাড়িদের ঐতিহ্য রক্ষা পাবে এবং সেই সঙ্গে সাশ্রয় হবে। মাচাং ঘর পরিবেশবান্ধব হিসেবে তৈরি হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, বান্দরবানে সাড়ে চার হাজারের বেশি লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ৩ হাজার ৫৬০টি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছি এবং ২ হাজার ৯৬৮টি ঘর গৃহহীনদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৯২টি ঘরের কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে ২৩০টি মাচাং আকারের ঘর। মাচাং ঘরগুলো যেহেতু বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, তাই গৃহপালিত পশু, বিভিন্ন জিনিস তারা এখানে রাখতে পারবেন।
এসপি