৪ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ, বেশি ভাড়ায় পারাপার
দীর্ঘ ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে শুলকুর বাজার এলাকার সেতুর নির্মাণকাজ। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে সদর, উলিপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলাসহ ৫ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের আগস্টে শুরু হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের ফেরুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ঠিকাদার পরিবর্তন করেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ।
সরকারের বাড়তি টাকা খরচ করে সেতুর পাশে কয়েক দফায় ড্রাম ও বাঁশের চাটাই দিয়ে অস্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। রাতের আঁধারে ড্রাম ও বাঁশের চাটাই খুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় নৌকার মাঝিদের বিরুদ্ধে।
ড্রাম ও চাটাই খুলে দেওয়া ও বিকল্প রাস্তা কেটে দেওয়া সব মিলিয়ে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে নৌকার মাঝিরা। তারা পারাপারের ক্ষেত্রে জিম্মি করে টাকা নিচ্ছেন পথচারীদের কাজ থেকে। এতে এক পাড়েই অটোরিকশাকে গুনতে হয় ৩০ টাকা। তাছাড়াও মোটরসাইকেল ২০ টাকা ও সাইকেল ১০ টাকা। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পারাপার হচ্ছেন পাঁচ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বর্ষা আসার আগে নির্মাণাধীন ব্রিজের বিকল্প রাস্তাটি শুকনো ছিল। বর্ষা মৌসুমে গত ৩-৪ মাস থেকে রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেলে ড্রাম ও বাঁশের চাটাইয়ে করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে ব্রিজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থানীয় নৌকার মাঝিরা রাতের আঁধারে ড্রাম ও বাঁশের চাটাই ভেঙে দেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের সালাম নামে এক মিশুক চালক বলেন, প্রতিদিন দুই-চার বার জেলা শহরে যেতে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। একবার পার হলে দিতে হয় ৩০ টাকা। দেখা যায়, সারা দিনে আমার ১২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। যা আয় করি এখানে নৌকা ভাড়া দিতেই শেষ। কোনো নিয়মনীতি নেই। যার কাছে যেমন পাচ্ছে ভাড়া নিচ্ছে তারা।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ব্রিজটির কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ার কারণে দুর্ভোগে রয়েছে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমি নৌকার মাঝিদের বলছি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কাজটি একটু দীর্ঘ হয়েছে। প্রথমে ব্রিজটির টেন্ডার হয়েছিল, সেই টেন্ডারে ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এখন কাজ চলমান আছে। আশা করছি যথাসময়ে ব্রিজটির কাজ শেষ হবে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, যদি নৌকার মাঝিরা নিয়মনীতি না মেনে পথচারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুয়েল রানা/এসপি