বাংলাদেশে ঢুকে বৃদ্ধ কৃষককে মেরে হাত ভেঙে দিলো বিএসএফ
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এক বৃদ্ধ কৃষককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের সদস্যরা। গতকাল বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিংনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ১৫ গজ ভেতরে ঢুকে বিএসএফ এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ৫৩, বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া।
আহত কৃষকের নাম এসলাম আলী (৭০)। তিনি উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের শিংনগর মোড়লপাড়া গ্রামের এরফান আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে পতাকা বৈঠক আহ্বান করে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি, আহত কৃষকের পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর ২টার দিকে নিজের পাটক্ষেতে কাজ করছিলেন এসলাম আলী। এসময় দৌলতপুর ক্যাম্পের ছয়-সাতজন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে তাকে পেটাতে থাকে। পিটিয়ে এসলামের এক হাত এবং আরেক হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেয় তারা। অনেক্ষণ ধরে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ফেলে যায় তারা।
আহত কৃষক এসলাম আলীর প্রতিবেশী ফেরদৌস ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, আহত অবস্থায় সীমান্ত এলাকায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা এসলাম আলীকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সেরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনার পর সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। এর আগেও বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশে ঢুকে কৃষকদের নির্যাতন করেছে। একজন বৃদ্ধ মানুষকে অন্যায়ভাবে মেরে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে তারা।
শিবগঞ্জ থানা পুলিশে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমান্তে বৃদ্ধকে নির্যাতনের বিষয়টি শুনেছি। তবে বিষয়টি যেহেতু সীমান্ত সংক্রান্ত, তাই বিজিবি-ই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বিজিবির একটি টহল দল পাঠানো হয়। টহল দল নিশ্চিত হয়েছে, বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের ১৫ গজ ভেতরে এসে এই মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে পতাকা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল। এসময় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, বিষয়টি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হবে। পতাকা বৈঠকে ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। আগামীতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিএসএফ। এই ঘটনার পর সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান বিজিবি অধিনায়ক।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস