শান্তিরক্ষী মিশনে নিহতের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কোটি টাকা প্রতারণা
কুমিল্লায় শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১১ সিপিসি ২। গতকাল রোববার (৯ অক্টোবর) কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যরা হলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পশ্চিম জামিরতলী গ্রামের মৃত শামসুল হকের মেয়ে নুসরাত জাহান জান্নাত (২৭) এবং তার ৩ সহযোগীদের মধ্যে মূলহোতা নুসরাত জাহান জান্নাতের স্বামী আব্দুর রহমান (৩৫), মোহাম্মদ নগর গ্রামের মৃত ইব্রাহিমের ছেলে শাহাবুদ্দিন প্রকাশ আলাউদ্দিন (৪৬), একই এলাকার আমির হোসেনের মেয়ে পারভীন আক্তার (৪৬), চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার থামপার গ্রামের সোলেমান মিয়ার ছেলে ইলিয়াস হোসেন(৩০), কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সালমানপুর এলাকার কিশোর খানের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৩৫) এবং কুমিল্লার বরুড়ার উপজেলার এগারগ্রাম এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে বশির উদ্দিন (৪৭)।
সোমবার (১০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন র্যাব ১১ সিপিসি ২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
মেজর সাকিব বলেন, গত ২০ আগস্ট হাসিনা বেগম নামের এক নারী ভুক্তভোগী কুমিল্লা র্যাব কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীর পরিচয়ে স্বামীর অনুদানের টাকা উত্তোলনের নামে প্রতারণার মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় নুসরাত জাহান জান্নাত নামের এক নারী।
জান্নাত কুমিল্লা নগরীর দৌলতপুর এলাকার টিএন্ডটি মোড়ের একটি বাড়ির মালিক। প্রতারক জান্নাত সে বাড়িতে ভাড়ায় থাকতো। বাসায় থাকতে গিয়ে বাসার মালিক হাসিনা বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এসময় প্রতারক জান্নাত নিজেকে শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তার ব্যাংকে কোটি টাকা আছে বলে জানায়। এ টাকার ভ্যাট স্বরুপ ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে মর্মে হাসিনা বেগমের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
অপর এক ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন গত ২ অক্টোবর র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ভুক্তভোগী বিল্লাল উল্লেখ করেন নুসরাত জাহান জান্নাত নামের এক নারী তার পাশের ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকত। এসময় জান্নাত নিজেকে শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তার ব্যাংকে অনুদানের কোটি টাকা আছে বলে জানায়। সে টাকা উত্তোলনের জন্য ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে মর্মে বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
২ ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে এ প্রতারণা চক্রের মূলোৎপাটন করতে সক্ষম হয় র্যাব। চক্রের মূলহোতা ছিল জান্নাত। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করে তার স্বামী আব্দুর রহমান, নিকটাত্মীয় শাহাবুদ্দিন, পারভীন, ইলিয়াস ফাতেমা এবং বশির।
গত রোববার কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতা নুসরাত জাহান জান্নাত এবং তার ৬ সহযোগিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন, ২টি চেক বই, নগদ ৩২ হাজার ৯শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকেরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় তারা এমন কৌশল অবলম্বন করে অনেক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের কল্যাণে র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরিফ আজগর/এমএএস