লাশ রেখে পালানো তরুণের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলেন রিমু
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ রেখে পালানো তরুণের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলেন রুবাইয়া ইয়াসমিন রিমু। ওই তরুণের নাম ফায়জুল করিম ফয়সাল। তিনি রিমুর বন্ধু।
সোমবার (০১ মার্চ) দুপুরে নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের তালুক মানুষমারা গ্রামের বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে বের হন রিমু। প্রাইভেটে না গিয়ে বন্ধু ফয়সালের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। রিমু রংপুরের কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তবে রিমুর পরিবারের দাবি, রিমুকে অপহরণের পর হত্যা করেছেন ফয়সাল। এ ঘটনায় জলঢাকা থানায় মামলা করেছেন রিমুর বাবা আবদুর রাজ্জাক। ফয়সাল ও তার বন্ধু রিজভীকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
ফয়সাল কচুকাটা ইউনিয়নের বর্মতল গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার (০১ মার্চ) নীলফামারী-জলঢাকা সড়কের রাজারহাট এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হন রিমু ও ফয়সাল। আহত অবস্থায় তাদের জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রিমুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রিমুর বাবার আবদুর রাজ্জাকের অভিযোগ, প্রাইভেট শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরছিল রিমু। টেংগনমারী বাজারের রজনীগন্ধা হোটেলের কাছ থেকে রিমুকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় ফয়সাল ও তার বন্ধুরা। রাজারহাটে যাওয়ার পথে ইটভর্তি ট্রলির সঙ্গে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় ফয়সাল। এতে গুরুতর আহত হয় রিমু। তাকে গুরুতর অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ফয়সাল। পরে রিমুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে মারা যায় রিমু।
রিমুর মা লিলি বেগম বলেন, আমার মেয়েকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই।
নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও রিমুর বান্ধবী নুরী আক্তার বলেন, টেংগনমারী বাজারে রশিদুল স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ি আমরা। সোমবার আমি ও রিমুসহ চারজন প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে রিমুর মোবাইলে কল এলে প্রাইভেট পড়বে না জানিয়ে চলে যায়। তখন বলে যায় প্রাইভেট শেষে তাকে ফোন দিতে। প্রাইভেট শেষে তাকে কল এবং মেসেজ দিয়ে সাড়া পাইনি।
ফয়সালের বাবা আবদুল্লাহ বলেন, আমার ছেলে চিকিৎসাধীন। রিমু আমার ছেলের পূর্বপরিচিত। অপহরণের প্রশ্নই আসে না। রিমু ও ফয়সাল প্রাইমারি স্কুলে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছে। পরে কলেজ পৃথক হলেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, রিমুর সঙ্গে ফয়সালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে ঘুরতে যেতেন। সোমবার ঘুরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন রিমু।
কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী বলেন, আমাকে কোনো পক্ষই বিষয়টি জানায়নি। তবে ফয়সালের সঙ্গে রিমুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শুনেছি।
জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিমুকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন বাবা। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এএম