ফরিদপুরে যুবলীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা পণ্ড
ফরিদপুরে যুবলীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা পণ্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল হলে এ ঘটনা ঘটে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান এবং ফরিদপুর পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান শামীমের নেতৃত্বে রামদা, লোহার রড, বাটাম, লাটি নিয়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন এ হামলা চালায়।
এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম জিলানী ও কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তবে হামলাকারীরা তাদের আঘাত করেনি। তাদেরকে হল থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অম্বিকা হল চত্বরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। পরে কর্মীসভা উপলক্ষে বেলুন উড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল অম্বিকা হলে ঢুকে নেতৃবৃন্দসহ আসন গ্রহণ করেন। ওই সময় হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথমে যুবলীগের ১০/১৫ নেতা হল রুমে হামলা করলে প্রতিরোধ করেন স্বেচ্ছাসেক দলের কর্মীরা। এর তিন-চার মিনিট পর যুবলীগের ৫০/৬০ জন লোক ওই কর্মী সমাবেশে হামলা করে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন। পিটিয়ে আহত করা হয় রাব্বী ইসলাম শুভ (১২) নামে মাইক অপারেটর এক শিশুকেও। পরে হামলাকারীরা ওই হল রুমের চেয়ার, সাউন্ড বক্স, মাইক্রোফোন ভাঙচুর করেন।
হামলার সময় হল রুম ও তার আশপাশে আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর কোনো সদস্য ছিলেন না। পরে হামলার ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলের নেতৃত্বে তিনটি গাড়িতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তবে তখন হামলাকারী কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ ওই হল রুমে ছিলেন না।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ও ২০ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মতিউর রহমানের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাফিজ, সদর উপজেলা আহ্বায়ক আবুল কালাম, সদথা উপজেলা সদস্য সচিব মামুন হাসান, সদরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইদ্রিস বেপারী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক রেজাউল তালুকদারসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এরা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ফরিদপুর পৌরসভার সচিব তানজিলুর রহমান বলেন, পৌরসভার মালিকানাধীন অম্বিকা মেমোরিয়াল হলটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ওই হলে ডেকোরেটরের মালামাল সরবরাহ করেছে ফরিদপুরের লাকি ডেকোরেটর।
লাকি ডেকোরেটরের মালিক সালাম শেখ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভার জন্য ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাপকভাবে চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক চেয়ার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর ফলে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা চলছিল অম্বিকা মেমোরিয়াল হলের ভেতরে। ওই সভা চলাকালে হামলা চালায় যুবলীগ। ফলে সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়।
তিনি বলেন, হামলার আগে ওই হল রুমের আশপাশে কোনো পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়নি। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য যুবলীগ কর্মীরা অম্বিকা হলের সামনে সমবেত হয়েছিল। তবে সেখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং আমি স্বেচ্ছাসেক দলের নেতাদের হল থেকে বের হতে সাহায্য করেছি।
জহির হোসেন/আরএআর