রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালসহ গ্রেপ্তার ৬
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী কবির ও চক্রের আরও ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাতিয়ানাংলা গ্রামের মেসার্স রিমন ট্রেডার্স নামক রাইস মিলের দক্ষিণ পাশে কাতিয়ানাংলা সুইজ গেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় চুরি হওয়া এক হাজার ২২০ কেজি লোহার পাইপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র্যাব-৬ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আব্দুর রকিব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. কবির শেখ (৪২), মো. বাবু শেখ (২৬), মো. জাবের শেখ (২৫), মো. মহসিন গাজী (২৪), মো. মিকাইল শেখ (২২) ও আবু হুরাইরা মোল্লা (২৪)।
র্যাব জানায়, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরকারি বিভিন্ন মালামাল স্থানীয় একটি চক্র বিভিন্নভাবে চুরি করে। অনেক ক্ষেত্রে জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে থাকে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের একটি গোয়েন্দা দল সেখানে নজরদারী চালিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে রামপালের সাতমারী এলাকার রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেল কোম্পানির অর্ন্তভুক্ত গানাত্রা হেভী লিফটারস কোম্পানির ৫নং ইয়ার্ড থেকে প্রায় ১২২০ কেজি (২৯টি) লোহার পাইপ কে বা কারা লুট করে নিয়ে যায়। যার অনুমানিক বাজার মূল্য ৬ লাখ টাকা।
সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই র্যাবের একটি চৌকশ দল ওই স্থানের আশেপাশে অভিযান পরিচালনা করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রের নেতা কবির শেখ ওরফে ‘কবির ডাকাত’সহ আরও ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার ভোরে র্যাব-৬, সদর কোম্পানির একটি আভিযানিক দল খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন কাতিয়ানাংলা গ্রামের মেসার্স রিমন ট্রেডার্স নামক রাইস মিলের দক্ষিণ পাশে কাতিয়ানাংলা স্লুইজ গেটে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অভিযান পরিচালনা করে কবিরসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরিকৃত ১২২০ কেজি লোহার পাইপ চোরাইকাজে ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, পলাতক আসামির ফেলে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল ও ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
কবির শেখ ওরফে ‘কবির ডাকাত’ বিভিন্ন সময় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় মালামাল লুট করে এবং একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসতো। কবির শেখ ওরফে ‘কবির ডাকাত’ এর অপরাধের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ১৪টি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে অস্ত্র মামলা ৩টি, একটি গণধর্ষণ মামলা, হত্যাচেষ্টা মামলা ৫টি, চুরি মামলা ৩টি উল্লেখযোগ্য। এই ‘কবির ডাকাত’ দাকোপ, রামপাল ও বটিয়াঘাটা এলাকায় ক্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল এবং এলাকার নাগরিকরা তার অপকর্ম হতে রেহাই পেতে মানববন্ধন করেছিল।
গ্রেপ্তার আসামি ও পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গানাত্রা হেভী লিফটারস কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ র্যাবের সহযোগিতায় বাদী হয়ে খুলনা র বটিয়াঘাটা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজুর কাজ প্রক্রিয়াধীন।
অপরদিকে, বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের ম্যাটেরিয়াল ৩নং পোস্টের সামনে থেকে ৪৩টি জিআই পাইপ জব্দ করেছে ৩ আনসার ব্যাটালিয়ন, রামপাল ক্যাম্প।
৩ আনসার ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতর থেকে পাইপ পাচার হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক চন্দন দেবনাথের নির্দেশনায় চৌকশ আভিযানিক দলটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যাটেরিয়াল ৩নং পোস্টের আশেপাশে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে ওই স্থানে কাঁটাতারের বাইরে জঙ্গলের মধ্যে পাচার করার উদ্দেশ্যে জমাকৃত পাইপ উদ্ধারে অভিযান পরিচালিত হয়। তল্লাশিকালে লুকিয়ে রাখা ৪৩টি ২ ইঞ্চি ব্যাসের ২০ ফুট লম্বা জিআই পাইপ জব্দ করা হয়। চোরাকারবারিরা ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের নিবিড় নজরদারির কারণে পাইপগুলো পাচার করতে পারেনি এবং পাইপগুলোর আশেপাশে কেউ না থাকায় কাউকে আটক করা যায়নি। পাইপের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক চন্দন দেবনাথ বলেন, এ জাতীয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উদ্ধারকৃত মালামাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মোহাম্মদ মিলন/এমএএস