নিখোঁজ মায়ের ‘লাশ শনাক্তে’ ময়মনসিংহে মরিয়ম
ময়মনসিংহে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ নিজের মায়ের কি না সেটি শনাক্তে ফুলপুর থানায় গিয়েছেন মরিয়ম ও তার বোনরা। উদ্ধার হওয়া ওই নারীর কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানিয়েছেন মরিয়ম।
২৮ দিন ধরে নিখোঁজ মা রহিমা বেগমের (৫৫) সন্ধানে শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহে যায় মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা। সকালে কাপড় দেখে মায়ের লাশ দাবি করেছেন মরিয়ম। তবে পুলিশ বলছেন, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ চূড়ান্ত শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল। তার কাপড় ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম ও তার বোনেরা থানায় এসেছে। তারা মৃত ওই নারীর স্যালোয়ার দেখে বলছে, তার মায়ের সঙ্গে মিলছে। এভাবে লাশ শনাক্ত করা সম্ভব না। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ডিএনএ টেস্টসহ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার বওলা এলাকায় একটি কবরস্থানের ঝোপ থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই লাশের পোশাক ও আলামত সম্পর্কে থানায় জানতে চান মরিয়ম। পোশাক ও উদ্ধার হওয়া আলামতের কথা শুনে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন মরিয়ম।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মরিয়ম। রাত পৌনে ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে মায়ের লাশ পাওয়ার বিষয়ে দেওয়া পোস্টে মরিয়ম লেখেন ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এই মাত্র।’
রাত ১২টা ৪ মিনিটে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, আর কারও কাছে আমি যাব না। কাউকে বলব না আমার মা কোথায়! কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো না আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন। কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি।’
শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আরেক স্ট্যাটাসে মরিয়ম লেখেন, ‘লাশটা পঁচা গলা অবস্থায় পেয়েছেন তারা। আমি অফিসিয়াল প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত, আমার মায়ের শরীর আমি কীভাবে ভুল করি। ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ এবং পিবিআই ময়মনসিংহ এবং র্যাব-১৪ আমাকে সার্বিক সহোযোগিতা করছেন এই বিষয়ে। অফিসিয়াল কাজের পরে আমি সবার সঙ্গে কথা বলব প্লিজ।’
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।
রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের পর মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলাও দায়ের করেন। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।
মোহাম্মদ মিলন/এসপি