এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাবা-মা
কোনো প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বাড়ি-ঘর উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও লুটপাট করা হয়েছে পুকুরের মাছ ও ছাগল-মুরগি। বাড়ি-ঘর উচ্ছেদের কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতন জীবনযাবন করছেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়ার ইউনিয়নের আরপি বাজারের কচুয়ারামপুরের জলিল প্রামাণিক।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উচ্ছেদকৃত ভিটের ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, প্রায় ৮০ বছর ধরে কেউ কোনো দিন এই জমি নিয়ে মামলা বা ঝামেলা করেনি। গত ২০ জুলাই উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি- একই এলাকার এই জমির আরেক উত্তরাধিকার কায়েম উদ্দিনের ছেল গাজীউর রহমানের লোকজন একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছে। পরবর্তীতে আমরা আইনজীবীর শরনাপন্ন হয়। তার আগেই দ্রুত ওই মামলার একপক্ষীয় ডিগ্রি পায় গাজীউরের লোকজন। এর বিরুদ্ধে আমরা গত ২৩ আগস্ট আপিল করি এবং গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
তারা বলেন, আপিল শুনানির দুইদিন আগেই গত ১২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে দুই গাড়ি পুলিশ, পাবনা কোর্টের লোকজন ও গাজীউর রহমানের ছেলে মাসুম, মো. মাসদুল, তাদের আত্মীয় তুফান ও আশরাফুলসহ শতাধিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে এসে আমার ঘর-বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এসময় তাদেরকে বাধা দিলে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে আটকে রাখে। আমরা তাদের কাছে বাড়ি ভাঙচুরের নোটিশ আছে কীনা জানতে চাইলেও তা দেখাতেও ব্যর্থ হয়।
আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলেও পুলিশ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তাদের বের করে দেয়। ৩টি থাকার ঘর, গোয়ালঘর, রান্না ঘরসহ ৬টি ঘর গুড়িয়ে দেয়। এসময় আমাদের আটকে রেখে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮-১০টা ছাগল ও বাড়িতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৩ লাখ টাকা ছিনে নিয়ে যায়। এমনকি আমার দুটি পুকুরের মাছও তারা লুট করে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী মো. জলিল বলেন, আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইও নেই। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব? কোথায় কি করবো, বুঝতে পারছি না। আমার সম্পূর্ণ কাগজপত্র ঠিক আছে, শুধু একপক্ষীয় বাটোয়ারা ডিগ্রি নিয়ে এসে আপিল শুনানির আগেই নোটিশ ছাড়া কেন আমাকে এভাবে পথে বসাল তার বিচার চাই।
অভিযুক্ত গাজীউর রহমানের ছেলে মো. মাসুম বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করেছি। আমার পুকুরের মাছ আমরা নিয়ে এসেছি, তাতে কি হয়েছে। আমরা কোনো ছাগল লুট করিনি, আমরা হাট থেকে ছাগল কিনে এনে জবাই করে খেয়েছি। যা করেছে সব কোর্ট করেছে, আপনারা কোর্টের কাছে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাকসুদা আক্তার মাসু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা কোর্ট থেকে করেছে এবং ডিসি অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিল। অবশ্যই নোটিশ দিয়ে করেছে। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়েছি। আর মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়ে ব্যক্তিগত, তাদেরকে এ বিষয়ে মামলা করতে হবে।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা কোর্ট থেকে করেছে। পুলিশ শুধু সহযোগিতা করেছে। নোটিশের মাধ্যমেই উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাকিব হাসনাত/এমএএস