ঘর-বাড়ি কিছুই নেই জোসনার, স্বামীসহ ঘুমায় অন্যের বাড়িতে
আমাগো এডা (একটা) বাড়ি আছিলো (ছিল)। নদীয়ে ভাইঙ্গা (ভেঙে) নিয়ে গেছে। এহন (এখন) থাকার কোনো জাগা (জায়গা) নাই। তাই মাইনসের বাড়িতে অসুখালা (অসুস্থ) স্বামী নিয়া থাহি (থাকি)। দিনে মাইনসের বাড়িতে কাম-কাজ করি। যা কামাই হয়, তাই নিয়া কষ্ট কইরা খাই। স্বামীর চিকিৎসা করার টেহা পাই না। বাড়িডা আছিল, সেটাও নদী ভাইঙ্গা নিয়া গেল। এহন (এখন) তো আর বাড়ি করবার পামুনা। মাইনসের বাড়িতে কয়দিন থাকবার দিবো (দেবে)। ঘুম আসে না মাইনসের বাড়িতে। বাড়িভিটার দুশ্চিন্তায় রাইত জাইগা থাহি।
এভাবেই বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ি পৌর শহরে বসতভিটা হারানো জোসনা বেগম (৪৪)। শুধু জোসনা নয়, পাশের বাড়ির চাতাল শ্রমিক খোদেজা বেগমেরও (৫৫) একই দুঃখ।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, উত্তর গড়কান্দায় ভোগাই নদীর পাড়ে ৫ শতক জমিতে ২ পরিবারের বসতভিটা ছিল। তাদের একজন দিনমজুর অসুস্থ ইউসুফ আলী, স্ত্রী জোসনাকে নিয়ে বসবাস করতেন। সন্তানরা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। তাদের ভিটামাটি ছাড়া কোনো জমি জমাও নেই। সেটাও ভোগাই নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। অপরজন দিনমজুর ফজল স্ত্রী খোদেজাকে নিয়ে বসবাস করে আসছিল। ভিটেমাটি হারিয়ে তারাও এখন নিঃস্ব।
তাদের অভিযোগ, ভোগাই নদীতে বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারের গাফিলতিতেই ১২ আগস্ট বসতভিটা বাড়িঘর ও গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার ২টির মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ২৬ দিন যাবৎ প্রতিবেশী ও স্বজনরা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তারা এখন ভূমিহীন। সরকারের কাছে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে চলতি বছর ভোগাই নদীর অন্তত এক কিলোমিটার বাঁখ ভেঙে যায়। এতে ফসলি জমি ও অন্তত ১০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়। নালিতাবাড়ী শহরের বুকচিড়ে প্রবাহিত এ পাহাড়ি নদীর ভাঙন হুমকিতে আছে একাধিক শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শহরের একপাড়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও অপরপ্রান্তে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হুমকির মধ্যে আছে নালিতাবাড়ী শহরও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী জানায়, গত বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদীর উত্তর গড়কান্দায় ১১০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। পাউবোর ৩৮ লাখ টাকার বাঁধ সংস্কারের ঠিকাদারি পায় ‘রিফাত এন্টারপ্রাইজ’। গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু দ্রুত বাঁধ সংস্কার না করায় ১০টি বাড়িঘর নদী ভাঙ্গঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্থায়ীভাবে কিছু কিছু এলাকায় বাশেঁর খুঁটি দিয়ে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে সেটা কোনো কাজেই দেয় না।
ক্ষতিগ্রস্ত ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি জিও ব্যাগ ফালানো অইত, তাইলে আমগর বাড়ি-ঘর ভাঙতো না। অহন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাইত কাটাইতে অইতাছে। সরকার যদি সহযোগিতা করতো, তাইলে আমগর বিরাট উপকার অইত।
খোদেজা বেগম বলেন, চাতালে কাম কইরা দিনে ২০০ টেহা পাই। স্বামী অসুস্থ কামে যাইবার পায় না। কত কষ্ট কইরা দিন চালাই। অহন শেষ সম্বল বাড়ি ভিডাটাও গাঙে ভাইঙা গেছে। আমরা কই যাইমু। আত্মীয়স্বজন ভাত দিলে খাওন চলে। রান্দুনের উপায় নাই। মাইনষের বাড়িতে রাইত কাডাই। চিন্তায় ঘুম ধরে না।
এ বিষয়ে রিফাত এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাইলিং করা হয়েছে। জিও ব্যাগও প্রস্তুুত হয়েছে। শুধু অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
নালিতাবাড়ির উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেলেনা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাপরটি কেউ জানায়নি। সরেজমিন দেখে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা করা হবে। যদি ঘর দেওয়ার মতো জায়গা থাকে, সরকারিভাবে ঘর দেওয়া হবে।
এমএএস