সাত জেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ১২ জনের মৃত্যু
দেশের সাত জেলায় বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দিনের বিভিন্ন সময় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বজ্রপাতে শেরপুরের নকলায় দুইজন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে দুইজন, নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রামে নারীসহ দুইজন, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় দুইজন, পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ায় দুইজন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় এক স্কুলছাত্র এবং ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার নারায়নকান্দি গ্রামে বজ্রপাতে বাবুল হোসেন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে ওই গ্রামের ধাপগাড়ীর মাঠ নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। বাবুল হোসেন ওই গ্রামের কাজীপাড়ার ইছাহক আীল মন্ডলের ছেলে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল জোয়ারদার জানায়, বাবুল হোসেন ধাপগাড়ীর মাঠের কাজ করে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই সময় বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে তার সারা শরীর পুড়ে যায়।
নারায়ণকান্দি পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার নকলা উপজেলায় পৃথক দুটি এলাকায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, উরফা ইউনিয়নের হাসনখিলা এলাকার মন্নেস আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম অপি (৩০) ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রেহারচর এলাকার মৃত. সিদ্দিক সরকারের ছেলে নাজমুল হক (৪৫)।
উরফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম তালুকদার ভুট্টো জানান, কৃষক রফিকুল ইসলাম অপি তার ভাইদের নিয়ে আমন ধান রোপনের জন্য সকালে বাড়ির পাশের বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলতে যায়। এসময় হঠাৎ বজ্রপাতে আহত হন তিনি। পরে তাকে সেখান থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, আলাদা ঘটনায় নাজমুল হক (৪৫) নামে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
নিহতের ভাই মোজাম্মেল হক কালা মিয়া জানান, সকালে বৃষ্টির সময় নদীতে মাছ ধরার জন্য নাজমুল হক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর সময় অতিবাহিত হলেও সে আর বাড়ি ফিরেনি। পরে তার বড় ভাই মোজাম্মেল হক কালা ওই গ্রামের সাবেক মেম্বার সফর উদ্দিনের পুকুড় পাড় থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
নকলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় পৃথকস্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, বেলা ১১টায় নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা হাওরে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে সাদিকুর রহমান (২৭) নামে এক কৃষক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিকুর রহমান কালিয়ারভাঙা গ্রামের জামিরুল ইসলামের ছেলে।
বেলা ১২টার দিকে উপজেলার বাল্লা-জগন্নাথপুর গ্রামে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই ওমর বিশ্বাস (২২) নামে আরেক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি ওই গ্রামের রবীন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে।
নবীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমেদ বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রামে বজ্রপাতে নারীসহ দুইজনের মুত্যু হয়েছে। এসময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও একজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির হাঁস চড়াতে বাইরে যায় ফাতেমা। হাঁস নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান তিনি। পরে বাড়ির লোকজন খোঁজাখুজি করে মাঠে পড়ে থাকতে দেখে মরদেহ বাসায় নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ফাতেমা বেগম (২৮) সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের তালঘড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
অপরদিকে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, সকাল থেকে উপজেলার ভবানীপুর বিলে ধানের জমিতে নিড়ানীর কাজ করছিলেন মিয়াজি (৪২) ও সেলিম (৩০) নামের দুই কৃষক।
এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মিয়াজির মৃত্যু হয়। সেলিম গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় বনপাড়া পাটোয়ারী হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। সেখানে তার চিকিৎসা চললেও তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
নিহত বেলাল মিয়াজি উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের হাজি আবুল হোসেনের ছেলে ও আহত সেলিম হোসেন একই গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় বজ্রপাতে আশরাফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর ও মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের আটিগ্রাম এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে।
তারা হলেন, ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর গ্রামের ফজলু মাতবরের ছেলে আশরাফুল এবং মিরপুরের ছাতিয়ান ইউনিয়নের আটিগ্রাম এলাকার জবেদ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর। বিষয় দুটি দুই থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলায় মঙ্গলবার সকালে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন, ঈশ্বরদী পৌরসভার ফতেমোহাম্মদপুর এলাকার মৃত হোসেন উদ্দিন ফকিরের ছেলে কৃষক আইন উদ্দিন (৭০)। অপরজন, আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের কাকমারি গ্রামের মহির উদ্দিন মোল্লার ছেলে সাদেক হোসেন মোল্লা (৩৮)।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার ও আটঘরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার ধোবাউড়ায় বজ্রপাতে আবু বকর (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের পূর্ব টাঙ্গাটি গ্রামে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আবু বকর ওই এলাকার শাহাবুদ্দিনের ছেলে। সে পাটকা দামপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ১০ম শ্রেণিতে পড়তো। ধোবাউড়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) জালাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এমএএস