শিক্ষার্থী নেই, তবুও এমপিওভুক্তির তালিকায় স্কুলের নাম
বিদ্যালয়টি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। তবে মাঝে মাঝে খোলা হয় অফিস। আসে না কোনো শিক্ষার্থী। তবুও চলতি বছরের ৬ জুলাই প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম এসেছে প্রতিষ্ঠনটির। শিক্ষার্থীবিহীন এমন একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খুশি হলেও বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়াবাড়ী খামাতপাড়ার মডার্ণ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে সব সময়। মাঝে মাঝে অফিস খোলা হলেও আসে না কোনো ছাত্র-ছাত্রী। এই প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে এমপিওভুক্ত হয়? মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্তির আবেদনের সময় ২০২০ সাল হলেও প্রতিষ্ঠানটি কাগজে-কলমে স্থাপিত দেখানো হয়েছে ২০০১ সালে। ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। তিনি বোন আতিকা বেগম ও ভগ্নিপতি আব্দুল মতিনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই মোখলেছুর রহমান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী বসে লুডু খেলছে। তাদের দু-একজনের কাছে স্কুলব্যাগ থাকলেও নেই খাতা-কলম। শিক্ষার্থীশূন্য বাকি দুটি শ্রেণিকক্ষ পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ। একটিতে মোটরসাইকেল ও অন্যটিতে কাঠখড় রাখা হয়েছে। অফিসরুমে বসে আছেন চারজন সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সামনে পড়ে রয়েছে ঠিকাদারের সিসি ব্লকের স্তূপ।
অভিযোগ রয়েছে, গত জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে গ্রামের পাঁচ-সাতজন শিক্ষার্থীকে বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে শ্রেণি কার্যক্রম সচল দেখানো হচ্ছে। যদিও শিক্ষকরা দাবি করেছেন, এসব শিক্ষার্থী তাদের বিদ্যালয়ের। তখন শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে শিক্ষকরা তা দেখাতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে বিদ্যালয়ে সময় দিতে পারেন না। এমপিওভুক্ত হওয়ার শর্ত হলো প্রত্যেক শ্রেণিতে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর পাবলিক পরীক্ষায় কম পক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ে একটি খেলার মাঠ থাকতে হবে। নিজস্ব জমি থাকতে হবে। কাগজে-কলমে জমি থাকলেও বাস্তবে এই বিদ্যালয়ের দখলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসলে শিক্ষকরা কী করবেন? তবে স্কুলে না আসলেও পরীক্ষায় ঠিকই অংশগ্রহণ করে তারা। আমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছি।
স্কুলের সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আমার জানা নেই। শুরুতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করায়নি এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এমপিও যেহেতু হয়েছে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। শিক্ষকদের বলেছি স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ১৪ হাজার টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে টিন কিনে বারান্দা তৈরি করতে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনিয়ম হলে যারা এমপিও দিতে পারেন, তারা বাতিলও করতে পারেন।
শরিফুল ইসলাম/এসপি