রসিকে ভোটের হাওয়া, কারা হচ্ছেন মেয়র প্রার্থী
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদপূর্তি হতে বাকি আর চার-পাঁচ মাস। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনের ক্ষণগণনা। নগরজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণাসহ সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। কেউ কেউ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও স্টিকার লাগিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। বসে নেই বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরারও। তবে এবারের নির্বাচনে কারা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।
ইতোমধ্যে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয় লোকজনের সেবার মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। নানাভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করছেন। হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। খেলাধুলা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন আগাম প্রচারণায় মেয়র-কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী কারা হচ্ছেন, কার অবস্থান কেমন, কে নির্বাচিত হতে পারেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষও আলাপ-আলোচনা করছেন। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাসহ পরিকল্পিত নগরায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচজন, জাতীয় পার্টির দুইজন, বিএনপির দুজন ছাড়াও জাসদ, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে বর্তমান মেয়রকে একক প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী, রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি ও পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সর্বত্রই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার পক্ষে রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির বৃহৎ একটি অংশ মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন রংপুর মহানগরের সভাপতি সফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ। তারা ইতোমধ্যে জনসমর্থন আদায়সহ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নগরীতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগিয়েছেন। পাড়া-মহল্লাতে সভা-সমাবেশও করছেন। এছাড়া সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসলেও রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের দলের দু-একজন নেতা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সাবেক সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু ও জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু।
এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক, তরুণ ব্যবসায়ী ও সংগঠক তানবীর হোসেন আশরাফি, নারী নেত্রী সুইটি আনজুম, ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনির নামও শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বাসদ থেকে আনোয়ার হোসেন বাবলু ও আব্দুল কুদ্দুস, ওয়াকার্স পার্টি থেকে কাজী মাজহারুল ইসলাম লিটন, ইসলামী আন্দোলন থেকে এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, খেলাফত মজলিস থেকে উপাধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান মণ্ড রাজু, এনপিপি থেকে শফিকুল ইসলাম রাকু প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর বাইরেও জাসদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, কল্যাণ পার্টি, জাকের পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও প্রার্থী দিতে পারেন।
এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস শুরু থেকে মিললেও দলগত সুবিধার দিকে থেকে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে এগিয়ে রাখছেন নেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যেখানে অন্যদলগুলো এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি, সেখানে জাতীয় পার্টি এগিয়ে আছে। দলের চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোস্তফার নাম ঘোষণা করেছেন। দলের শীর্ষ নেতারাও মোস্তফার পক্ষে একযোগে কাজ করছেন।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ আগস্ট শনিবার বিকেলে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোড়স্থ জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের মোস্তফার সঙ্গে থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে আহ্বানও জানান। পার্টির চেয়ারম্যানের এ ঘোষণার পর থেকে মেয়র মোস্তফার সমর্থক ও দলের নেতাকর্মীরা নগরীতে বেশ কয়েকবার শোডাউন করে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারণায় সরব হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। এখন শুধু পাড়া-মহল্লায় জনসংযোগ বা জনসমর্থন সৃষ্টিতে ব্যস্ততার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ তৎপরতা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে মেয়র পদপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদের পক্ষে তাদের কর্মী-সমর্থকরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানিয়েছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ সিটি নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপি এবারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নাও নিতে পারে। তারা বলছেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯, নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ৬২ হাজার ৪০০, ধানের শীষ পেয়েছিল ৩৫ হাজার ১৩৬ এবং ইসলামী আন্দোলন পেয়েছিল ২৪ হাজার ৬ ভোট। তাই এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনী মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি জানান, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। সব সময় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের ভিশন মিশন বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে রংপুরের উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করে গেছেন।
রংপুরকে পরিকল্পিত, গোছালো ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়তে হলে শুধু আবেগের বশে একটা দল বা ব্যক্তির পক্ষে না থেকে ভোটারদের বৃহৎ স্বার্থে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে এখনই চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ্। মানুষ এখন বোঝে সরকারের লোক ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী তুষার কান্তি মণ্ডল। তিনি মহানগরের সাধারণ সম্পাদক। ভোট আমেজ শুরুর আগ থেকেই তিনি মাঠে আছেন। প্রতিদিন পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন সবখানে। সম্ভাব্য এই প্রার্থী জানান, নেত্রীর উন্নয়নের কথাগুলো তিনি প্রথম থেকে বলে আসছেন। দলের অন্য কেউ সেভাবে বলেননি। প্রায় চার বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে ৯৫২টি পাড়ার মধ্যে ৮০০ পাড়ায় উঠান বৈঠক করেছেন। এজন্য তিনি মনে করেন রংপুর সিটিতে শেখ হাসিনা তাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেবেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র একেএম আবদুর রউফ মানিকও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসে থেকে হঠাৎ নির্বাচনী মাঠে ফেরায় এখন পর্যন্ত তার তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। নির্বাচনে প্রার্থিতা করার প্রসঙ্গে মানিক জানান, তিনি আট বছর মেয়র ছিলেন। ওই সময়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। নগরকে সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে নগরবাসী চায়নি বলে তিনি নির্বাচিত হননি। এবার তিনি নির্বাচন করবেন। দলের কাছে লাঙল প্রতীক চাইবেন। বাকিটা দলের ব্যাপার। তবে তিনি দলীয় প্রতীক পাওয়ার আশা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন।
রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি সামছুজ্জামান সামুও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয় এবং ভোট যদি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়, তাহলে রংপুরে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে।
এছাড়া ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, আমি আশা করছি এবার মেয়র পদে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বিল বোর্ড টাঙিয়েছেন তার সমর্থকরা। দেখা গেছে ব্যানার ও ফেস্টুন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগিয়েছেন স্টিকার। তিনি দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে আরেক সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলারও কয়েকটি ফেস্টুন দেখা গেছে।
এদিকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মাঠে নেমে ভোটের অংক কষলেও সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহল হিসেব কষছে প্রত্যাশিত উন্নয়নের আগাগোড়া নিয়ে। এখনো এই সিটিতে গঠন করা হয়নি রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাস্তাঘাটসহ চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও কর্পোরেশনের অর্গানোগ্রাম ও মাস্টারপ্লান অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান হয়নি। মূলত আগামী নির্বাচনে এসবই ইস্যু হয়ে উঠবে।
বর্তমান মেয়রের আমলে প্রধান রাস্তাগুলোর খানাখন্দ আর কাদা-জলে ভরা পথচলার দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মেলায় সন্তুষ্ট নাগরিক-সমাজ। তবে সুশীলজনরা বলছেন, অর্গানোগ্রাম ও মাস্টারপ্লান এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে না পারা প্রমাণ করে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অপরিকল্পিত। যার প্রভাব পড়বে ভোটের অংকে।
বিশিষ্ট সংগঠক ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সামনে নির্বাচন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই মাস্টারপ্লানের রূপ নগরবাসী দেখল না। আমাদের শ্যামাসুন্দরীর সংস্কারের ব্যাপারেও কোনো আশার আলো নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ১২টি বছর কেটে যাচ্ছে। আমরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জিনিসের মধ্যে ঝুলে আছি। মাস্টারপ্ল্যান নেই, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নেই, শ্যামাসুন্দরী রক্ষার কোনো প্রকল্প নেই। এসব কারণে সিটি কর্পোরেশনের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে আমরা নগরবাসী বঞ্চিত। একইসঙ্গে পরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সিটি নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সাড়ে চার বছর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্ধিত এলাকাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এবার কাজ করা হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং জনসেবা বন্ধ ছিল না। যেকোনা সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিষদ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার বিশ্লেষণে এগিয়ে থাকবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে রংপুর নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ও মাস্টারপ্ল্যান ঝুলে আছে। তারপরও আমি এই নগরকে পরিকল্পিত ও গোছালো হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পাঁচ বছরে সবকিছু পরিবর্তন হবে না, এর জন্য সময় লাগবে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। আমার বিশ্বাস আসন্ন সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।
এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে গত ১৯ আগস্ট থেকে। সর্বশেষ এই সিটিতে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। নির্বাচিত কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। যেহেতু কোনো সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর, তাই এ সিটিতে নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে রসিক সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন হয় ২০১২ সালের ২৮ জুন। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছর ২০ ডিসেম্বর। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছে চার লাখের বেশি। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন।
এসপি