একই নামে দুটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, নেপথ্যে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে একই নামে দুটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটির ক্যাম্পাস জেলা শহরের ফুড অফিস মোড়ে, অপরটি নিউ ইসলামপুর মহল্লায়।
এদিকে একই নামে দুটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অবস্থায় বিষয়টির সমাধান চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারক লিপিও দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একই নামে দুটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপনের পেছনে মূল কারিগর বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের (পুরনো) প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর তিনি একই নামে আরেকটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খানের কাছে স্মারকলিপি দেন সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের একাংশের অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে একই নামে দুটি বিদ্যালয় চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে। একটির ক্যাম্পাস জেলা শহরের ফুড অফিস মোড়ে। অপরটি চলছে নিউ ইসলামপুর মহল্লায়। ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আসাদকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বহিষ্কার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, বরখাস্ত হওয়ার পর নতুন করে একই নামে সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন আসাদুজ্জামান আসাদ। এমনকি মূল বিদ্যালয়টি দখলে পাঁয়তারা করছেন তিনি। এছাড়াও মূল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও নির্বাহী কমিটিকে হয়রানি করতে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। তাই এর প্রতিকার পেতে ও সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই নামে স্কুলে প্রতিষ্ঠা করলেও সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম। এ অবস্থায় বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে আসাদুজ্জামান আসাদ মূল স্কুল দখলে নিতে অপপ্রয়াস চালাতে থাকেন। এমনকি ২০২১ সালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলে ছাত্রদের নতুন বই পেতে বিঘ্ন হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করে বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের নির্বাহী কমিটির নির্বাহী সচিব মোহা. হান্নান হোসাইনকে স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। অথচ সেই আদেশও মানেননি আসাদুজ্জামান।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান আসাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানটিই সঠিক রয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে মূল প্রতিষ্ঠানের কিছু অংশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে নিয়ে নতুন করে জেলা শহরের ফুড অফিস মোড়ে সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের নামে স্কুল খুলে পাঠদান শুরু করে আম্বিয়া খাতুন মিলি।
সুইড বাংলাদেশের মেন্টর জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করেছিল। এবিষয়ে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে আমরা ওই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সাথে কথা বললেও তারা মুখ খুলেননি। আমরা দুটি প্রতিষ্ঠান এক করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকজন অভিভাবক আমার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অভিভাবক বিলকিস খাতুন, নাসিমা খাতুন, জান্নাতুল খাতুন, সায়েরা খাতুন প্রমুখ।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এসকেডি