চাঁদপুরের মাছঘাটে নেই ইলিশ, হতাশ ব্যবসায়ীরা
দেশের অন্যতম বৃহৎ ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তগুলো এখন ফাঁকা। ইলিশের আমদানি কম থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে অলস সময় কাটাচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। স্বল্প সংখ্যক মাছ আমদানি হলেও দাম অনেক চড়া। যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর মাছঘাটের অধিকাংশ আড়তে এখন সুনসান নীরবতা। সাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীর ইলিশও তেমন আসছে না। তাছাড়া এ বছর মেঘনা ও পদ্মা নদী থেকে জেলেরা ফিরছেন খালি হাতে। ঘাট-পন্টুন পুরোটাই ফাঁকা। মাছের নৌকা বা ফিশিং বোট তেমন নেই। আড়তগুলোর লেবাররা পন্টুনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ইলিশের টুকরিগুলো স্তূপ করে রাখা। মৎস্য ব্যবসায়ীর সংখ্যাও খুব কম। মাত্র কয়েকটি আড়তে বসে আছেন কর্মচারীরা। সামনে অল্প মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য বসে আছেন খুচরা ইলিশ বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এক কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১ হাজার ৭০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ১১০০-১৩০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশ বিক্রেতা হুমায়ুন আহমেদ জানান, চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা ও সমুদ্র থেকে আগের মতো ইলিশ না আসায় মাছের দাম একটু বেশি। এখন নদীতে ইলিশ কম থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। যার কারণে আমরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশের আমদানি খুবই কম। ঘাটে ফুটবল খেলা যাবে। সব মিলিয়ে ১০০ মণ মাছ আমদানি হয়েছে। যেখানে আগে প্রতিদিন গড়ে দুই-তিন হাজার মণ ইলিশের আমদানি ও বিক্রি হয়েছে।
ইলিশের আড়তদার জীবন গাজী জানান, গত কয়েক বছর ধরে অনেক মাছ এসেছে এই ঘাটে। সেই তুলনায় এখন আর মাছ আসে না। আগে এখানে হাজার হাজার মণ ইলিশ এসেছে।
তিনি বলেন, জেলেদের কাছে আমাদের ৫ লাখ, ১০ লাখ টাকা দাদনে পড়ে আছে। এজন্য আমরা ব্যবসায়ীরা খুব হতাশায় দিন কাটাচ্ছি। মাছ না থাকার কারণে মাছের দাম অনেক বেশি। চাঁদপুরে লোকাল মাছের কেজি প্রায় ১৯ শ টাকা পড়ে। এছাড়া সাগর ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইলিশ সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মাছের দাম বেশি। আমরা আশা করছি সামনে মাছ আসবে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার বলেন, চাঁদপুরে ইলিশ মাছ অনেক কম। যেখানে আগে প্রতিদিন ২০০০ মণ থেকে ১০০০ মণ ইলিশ আসত। এখন দিনে মাত্র ১০০ মণ ইলিশ আসে। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক লসে আছি। সমুদ্র উত্তাল হওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। এখন আবহওয়া অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে ইলিশ সরবরাহ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, এক মাস পর মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান আসছে। এই এক মাসে যদি ইলিশ সরবরাহ বাড়ে তাহলে কোনো রকম টিকে থাকা যাবে। ভরা মৌসুমে আমরা ব্যবসায়ীরা তেমন একটা ভালো লাভ করতে পারিনি। প্রত্যেক ব্যবসায়ী ও জেলেরা লোকসানে আছে। ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, আমরা গত অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু এবার বৃষ্টি অনেক কম, তাই ইলিশ ধরা পড়ছে না। বৃষ্টি হলে আমরা আগস্টের শেষের দিক থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচুর ইলিশ পাব।
আরএআর