শিক্ষক দম্পতি হত্যা পরিকল্পিত, দাবি স্বজনদের
গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করছেন তার স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মোসাম্মত মাহমুদ আক্তার জলির মরদেহ তাদের প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত একেএম জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, জিয়াউর রহমান দীর্ঘ দিন ধরে টঙ্গীর একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে সেখান থেকে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী মোসাম্মত মাহমুদ আক্তার জলি আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা পরিবার নিয়ে গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা দুজনই স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে মামাতো ভাইকে গাড়িতে তুলে স্ত্রীর স্কুলে যান জিয়াউর। সেখান থেকে তাকে গাড়িতে তুলে মামাতো ভাইকে রাস্তায় নামিয়ে দেন। পরে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তার ছেলে মিরাজ সাড়ে ৬টা থেকে পৌনে ৭টার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাবা ফোন রিসিভ না করায় মায়ের ফোনে ফোন দিচ্ছিলেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসার কথা জানায়। ওই সমর তার মায়ের কথাবার্তায় ক্লান্তির ভাব বুঝতে পারেন। এরপর আর ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন।
নিহত শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, সবশেষ গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ওই সময় মায়ের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় মায়ের কণ্ঠ ভার ছিল। তারপর কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি।
ভোরের দিকে গাছা থানার দক্ষিণ খানকুর বগারটেকে হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের ওপর তাদের প্রাইভেটকার দেখতে পেয়ে কাছে যাই। এ সময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে তাদের প্রথমে বোর্ডবাজার এলাকার তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অপর একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের মরদেহ গাছা থানায় আনা হয়।
নিহতের সহোদর বড় ভাই মো. রিপন বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পুরোপুরি পরিকল্পিত। তারা সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই নেয়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত নাই হতো, তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। তার কিছুই তারা নেয়নি। শুধু জান দুটা নিয়ে গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শিহাব খান/এসপি