পরিচয় না মেলায় ২ বছর ৯ মাস ধরে কারাবন্দী
৪৪ বছর বয়সী লোকটি দেখতে অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো। মুখে দাড়ি আছে। তিনি যে ভাষায় কথা বলছেন সেটা কেউ বুঝতে পারছেন না। এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছবি পাঠিয়েও তার কোনো তথ্য মেলেনি। ফলে বিনা অপরাধে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে দুই বছর ৯ মাস ধরে বন্দী আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পরিচয় না মেলায় তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডির ভিত্তিতে থানার এসআই মোহাম্মদ ইউনুচ আলী গাজী ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আবেদন জানান। আবেদনের ভিত্তিতে জেলা কারাগারের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। সেই থেকে (২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর) কারাগারেই রয়েছেন অজ্ঞাতনামা এই ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কোনো মামলাও হয়নি। বিনা সাজায় বছরের পর বছর বন্দী রয়েছেন তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বুধবার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, লোকটির ভাষা বোঝা যায় না। কথা বলেন কম। মাথা নেড়ে অভিব্যক্তি জানান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা তা পরীক্ষা করাতে খুলনা মেডিকেলেও নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ বলে মত দিয়েছেন।
বিষয়টি নজরে আসার পর ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস বন্দি ব্যক্তির নাম-পরিচয় খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ৩১ জুলাই আদালতের আদেশ মতে টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া, ভাসানচর থানার ওসিসহ ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার ছবি পাঠানো হয়। ওই আদেশে বন্দী লোকের সঠিক ঠিকানা খুঁজে পেতে নোয়াখালী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার ও এপিবিএন কমান্ডারদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে টেকনাফ থানা পুলিশের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা দোভাষীর সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু দোভাষী ওই বন্দীর কথা বুঝতে পারেননি। তবে দোভাষীর ধারণা লোকটি রোহিঙ্গা। এতে করে অজ্ঞাতনামা ওই বন্দীকে নিয়ে আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ঝিনাইদহ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে বিনা বিচারে একজন পরিচয়হীন ব্যক্তি কারাবন্দী আছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তার পরিচয়ও অজ্ঞাত, সেই কারণে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) মূলে বিজ্ঞ আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ৩৩ মাস ধরে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাকে দেখে রোহিঙ্গার মতো মনে হয়। তার বাড়ির ঠিকানা ও পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি বলে তাকে জামিন দেওয়া বা কারাগার থেকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস উদ্যোগ নিয়েছেন। অজ্ঞত ওই ব্যক্তির আঙুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আব্দুল ছালেক ঢাকা পোস্টকে জানান, গত সপ্তাহে আদালতের নির্দেশে আমাদের অফিসে পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য রোহিঙ্গা সন্দেহে একজনকে আনা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন অফিসের সার্ভারে তার কোনো তথ্য মেলেনি।
তিনি আরও জানান, দেশের কোনো নাগরিক যদি ভোটার না হয়ে থাকে। তাহলে নির্বাচন অফিসের সার্ভারে তার কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর