ভরসা এখন পুলিশের করোনা নিবন্ধন বুথ
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হলেও আক্ষরিক অর্থে অনেকেই জানেন না করোনাভাইরাসের টিকা (ভ্যাকসিন) নিবন্ধনের প্রক্রিয়া। ফলে শিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিতরা শঙ্কায় থেকে যাচ্ছেন টিকাগ্রহণ নিয়ে। বাস্তবতা হলো দেশে করোনার সংক্রমণ যত দ্রুত ছড়িয়েছে, তা প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের পক্ষে বৃহত্তর জনমত গড়ে উঠছে না গুজবের বেড়াজালে।
তবে ব্যক্তির অদক্ষতা আর গুজবের ধোঁয়াশা কাটাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বরিশাল পুলিশ। লকডাউন চলাকালীন সামনে থেকে যেমন জনগণের সুরক্ষায় কাজ করেছেন, তেমনি টিকাদান কর্মসূচিতেও ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন বুথ বরিশালের মানবিক পুলিশকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে।
বরিশাল মেট্রো ও রেঞ্জ পুলিশের আওতায় বিভাগে ২২টি রেজিস্ট্রেশন বুথ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন চলে এই বুথগুলোতে। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের এইসব সেবাকেন্দ্র থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে টিকাগ্রহণ করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে টিকাগ্রহণকারী নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান রানা বলেন, পুলিশের এই বুথ থেকে আমি সহজেই সেবাগ্রহণ করেছি। করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে পুলিশ সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। মানুষের মাঝে কোনো ধরনের বিপরীত মনোভাব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ মানুষ পুলিশকে ভরসা করে। সুতরাং গুজব কাটিয়ে করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে পুলিশের রেজিস্ট্রেশন বুথ খুব ভালো উদ্যোগ।
বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জগদীশ চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত এই হাসপাতালে রেজিস্ট্রশন করে টিকাগ্রহণ করেছেন ১৫৫২ জন। শুধু যে পুলিশ সদস্যরা এখানে টিকাগ্রহণ করেন তেমন নয়, সাধারণ মানুষও পুলিশের বুথ থেকে রেজিস্ট্রশন করে টিকা নিতে পারেন।
এ ছাড়া রেঞ্জ পুলিশের আওতায় ২১টি বুথ খোলা হয়েছে। যেখানে টিকা রেজিস্ট্রেশনের জন্য সাধারণ মানুষকে সহায়তা করা হয়।
বরগুনার পাথরঘাটা থানার লেমুয়া বাজারের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, টিকা নেওয়ার নিয়ত অনেক আগেই করেছি। কিন্তু আমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিলাম না। পাথরঘাটা থানায় পুলিশের বুথে যোগাযোগ করায় তারা আমাকে রেজিস্ট্রেশন করতে খুব সহায়তা করেছেন। আমি অল্পতেই রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পেরেছি।
এই টিকাগ্রহণকারী বলেন, আমার মতো অনেকেই হয়তো রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় টিকা নিতে পারছে না। কিন্তু পুলিশ বুথ খোলায় নির্ভাবনায় সেই ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া গেছে।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির স্টাফ অফিসার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালমান হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, এখন পর্যন্ত দুই হাজারের অধিক মানুষ পুলিশের রেজিস্ট্রশন বুথের মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন। ডিআইজি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক বরিশাল জেলায় ৫টি বুথ, পটুয়াখালী জেলায় দুইটি, ভোলায় একটি, পিরোজপুর জেলায় একটি, বরগুনা জেলায় ৮টি ও ঝালকাঠি জেলায় ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বরিশাল জেলার ৫টি বুথ থেকে ১৬৭ জন, পটুয়াখালীর দুটি বুথ থেকে ২৩৮, ভোলার একটি বুথ থেকে ৭০, পিরোজপুরের একটি বুথ থেকে ৫৭৪, বরগুনার ৮টি বুথ থেকে ৫৫৭ ও ঝালকাঠির ৪টি বুথ থেকে ৭২ জন সেবাগ্রহণ করেছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ যে শুধু অপরাধ নিয়ে কাজ করে তেমন নয়। মানবিক কাজই পুলিশের মুখ্য। সে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছে রেঞ্জ পুলিশ।
বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক বলেন, থানায় থানায় যেসব বুথ করা হয়েছে সেখানে কাঙ্ক্ষিত সারা এখনো আমরা পাইনি। টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ সন্তোষজনক নয়। তবে স্টুডেন্ট কমিউনিটি দিয়ে যে বুথটি করা হয়েছে সেখানে ব্যাপক সারা পেয়েছি। টিকাগ্রহণে মানুষকে আগ্রহী করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বিভাগে ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন। টিকা প্রদানে পুলিশের বুথ একটি ভালো কার্যক্রম।’
এমএসআর