এক লাখ টাকায় শুরু, এখন বছরে আয় ২৫ লাখ
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার লাউড়ি গ্রামের সফল কৃষি উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন বি কে ইকো গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে তিনি প্রায় ৯ প্রকারের ফল চাষ করেন।
আফজাল হোসেন লাউড়ি গ্রামের মোশারেফ গাজীর ছেলে। তিনি ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এক লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বিঘা জমিতে কাটিমন জাতের আম এবং থাই ড্রাগন চাষ শুরু করেন। এর মাধ্যমেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। এক সময় ফল চাষ তার নেশায় পরিণত হয়। বাড়াতে থাকেন জমির পরিমাণ। বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রোপণ করতে শুরু করেন। বর্তমানে তার নার্সারি এবং বাগানের পরিমাণ প্রায় ২৫ বিঘা। যা পুরো জেলার মধ্যে বৃহত্তর ফলের বাগান বলে ধারণা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
যেখানে রয়েছে এক হাজার ২০০টি মাল্টা গাছ, ১০০টি কমলা গাছ, ৪ হাজার থাই কুল গাছ, ১২ হাজার ড্রাগন পিলার, ১০০ চুইঝাল গাছ, ১০০ কাগজি লেবু গাছ এবং বারোমাসে কাটিমন আম গাছ রয়েছে ৩০০টি। এক লাখ টাকা দিয়ে এই নার্সারি এবং ফলের বাগান শুরু করে বর্তমানে তার মূলধন দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। প্রতিবছর প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করছেন।
আফজাল হোসেন বলেন, দেশে আসার পর থেকে দুই বিঘা জমিতে এই ফল চাষ শুরু করি। একটা সময় এটি একটা নেশায় পরিণত হয়ে গেল। তারপর ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ রোপণ করলাম। বর্তমানে আমার ২৫ বিঘা জমিতে ৯ ধরনের ফল উৎপাদন হচ্ছে। এক লাখ টাকা দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আমার মূলধন রয়েছে অর্ধকোটির ওপরে। ভবিষ্যতে জায়গার পরিমান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সরকার সুযোগ-সুবিধা করে দিলে আমরা এ সকল ফল বাহিরের দেশে রপ্তানি করতে পারব।
আফজাল হোসেন শুধুমাত্র নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেননি। বরং তিনি গ্রামে ২০ জন হতদরিদ্রের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। যেখানে শ্রম দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে ২০টি পরিবার। শ্রমিকরা প্রতিদিন গাছের পাতা ছাঁটা, গোড়া পরিষ্কার করা, পানি দেওয়াসহ নানাভাবে গাছের যত্ন নিয়ে থাকেন। নানা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েও আফজাল হোসেনও তাদের সঙ্গে শ্রম দেন।
আফজাল হোসেনের বাগানের কর্মচারী ছোট মিয়া বলেন, আমরা সকাল থেকে এখানে গাছ নিড়ানি দেই, পাতা ছাঁটি, মাটি দেওয়াসহ নানা রকম পরিচর্যার কাজ করি। সবুজ সমারোহ আর ফলের সুগন্ধের মধ্যে আমাদেরও কাজ করতে ভালো লাগে। আমরা এখানে মোট ২০ জন কাজ করি। এখানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে।
আরেক কর্মচারী মিন্টু বলেন, গ্রামে অনেক বেকার যুবক রয়েছে। তারা যদি এমন কর্মসংস্থান তৈরি করে তাহলে গ্রামের আরও ১০টা পরিবার সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
আফজাল হোসেনের নার্সারি এবং ফলের বাগান অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে দূর-দূরান্তের মানুষের। বিভিন্ন জেলা থেকে পরামর্শ নিতে এবং সরেজমিনে আফজাল হোসেনের এ বাগান দেখতে আসছেন অনেকেই। তারাও এমন কর্মকাণ্ডকে ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি বলে মনে করছেন। আফজাল হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন ফলের চারা সংগ্রহ করে তারাও স্বপ্ন বুনছেন উদ্যোক্তা হওয়ার।
আফজাল হোসেনের বাগান দেখতে চট্টগ্রাম থেকে আসা লিটন ঘোষ বলেন, আমি এর আগে এত বড় ফলের বাগান দেখিনি। আফজাল ভাইয়ের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর তার এই প্রজেক্ট দেখতে এসেছি। তার পরামর্শ অনুযায়ী চট্টগ্রামেও আমি এমন একটি বাগান করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে এমন উদ্যোগ নিলে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনিরামপুর উপজেলার মধ্যে সব থেকে বড় মিশ্র ফলের বাগান তৈরি করেছেন মনিরামপুরের সফল কৃষি উদ্যেক্তা আফজাল হোসেন। হয়তো এটা জেলার মধ্যেও সর্ববৃহৎ। আফজাল হোসেন কৃষি অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। কৃষি অফিস তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তার দেখাদেখি বেকার যুবকরাও এ ধরনের প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা করছে।
আরএআর