বাবার ভিটার অধিকার না ছাড়ায় প্রাণ সংশয়ে বোন
রাজশাহী নগরীতে বাবার ভিটের অধিকার না ছাড়ায় প্রাণ সংশয়ে আলেয়া বেগম (৫৫) নামে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী ও তার সন্তান। বেদম মারধরের পর তাকে বাবার ভিটে ছাড়া করার চেষ্টা চালিয়েছেন দুই ভাই ও ভাতিজারা।
ভুক্তভোগী আলেয়া বেগম নগরীর রামচন্দ্রপুর বউ বাজারের মৃত খলিলুর রহমানের মেয়ে। প্রায় ২৮ বছর আগে স্বামী আজিজুল হকের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকেই একমাত্র ছেলে আবুল বাসার মুক্তাকে নিয়ে বাবার ভিটায় আশ্রয় নেন আলেয়া বেগম।
আলেয়া বেগমের অভিযোগ, ২৬ ও ২৭ জুন দুই দিন ধরে তার পরিবারের ওপর তাণ্ডব চলে। প্রতিকার পেতে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৪ জুলাই রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলায় আসামি করেন ছোটো ভাই আব্দুল খালেক ওরফে বাচ্চু (৫০), তার স্ত্রী পারুল বেগম (৪৫), দুই ছেলে জাকির (২৫) ও জয় (২২), মেয়ে অর্ণা খাতুন (২০), আরেক ছোটো ভাই মো. সুলতান (৪০), তার ছেলে বিশাল (২০) এবং বড় ভাই চাঁন মিয়ার ছেলে হাসিমকে (৪০)।
আলেয়া বেগম আরও বলেন, আমার বাবার ভিটা আড়াই কাঠার মতো। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের অংশ রয়েছে সেখানে। বাবা মারা গেছেন ১৯৯১ সালের দিকে। তারপরও ভাই-বোনদের মধ্যে ভিটা ভাগবাটোয়ারা হয়নি। বর্তমানে তিনি এবং ছোটো বাচ্চু ও বড় ভাই চাঁন মিয়া যার যার মতো মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।
ছোটো ভাই সুলতান পরিবার নিয়ে নওহাটায় বসবাস করেন। সুলতানের দাবি, তার অংশটুকু আমার দখলে। উচ্ছেদ করতে ২৬ জুন দুপুরে বাড়িতে হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে। বাধা দেওয়ায় ব্যাপক মারধর করে তারা।
ওই সময় তাকে রক্ষায় এগিয়ে যান ভাগ্নি রিনি বেগম ও তার প্রতিবন্ধী ছেলে তাসবির। তাদের দুজনকে বেধড়ক পেটায় তারা। পরদিন আবারও ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে হামলা চালান সুলতান। বাড়িঘর ভাংচুর করে মালামাল রাস্তায় ফেলে দেন।
ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না আলেয়া বেগমের ছেলে আবুল বাসার মুক্তা। তিনি বলেন, যখন তাদের বাড়িতে তাণ্ডব চলে তখন সাহায্য চেয়ে তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেন। খবর পেয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্টো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে হামলাকারীরা। হামলাকারীরা ভাঙচুর ছাড়াও বাড়িতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার এবং গরু বিক্রির দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এতে তাদের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আবুল বাসার মুক্তা বলেন, ঘটনার পর তিনি থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা নেয়নি। উল্টো হামলাকারীদের সাজানো মামলা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে তার মা আদালতে যান। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের ভার দিয়েছেন।
আবুল বাসার মুক্তা জানান, ঘটনার পর থেকে তারা ভিটে ছাড়া। আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই কেটেছে ঈদ। বাড়িতে ফিরলে নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। জীবনের নিরাপত্তাসহ ঘটনার প্রতিকার চান তারা।
এ বিষয়ে আরএমপি পুলিশের নগর মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন পূর্বের তাই বিষয়টি না জেনে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে ঘটনা জেনে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
আরআই