পুলিশে দুই মৃত্যু : এডিসি লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন কনস্টেবল মাহমুদুল
মাগুরার শ্রীপুরে খন্দকার লাবণী (৪০) নামে এক অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারের (এডিসি) আত্মহত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর জেলা পুলিশ লাইন্সে মাহমুদুল হাসান (২৩) নামে এক কনস্টেবলের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনার যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ নিয়ে মাগুরাসহ সারা দেশে নানামুখী আলোচনা চলছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ নিহত পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান এর আগে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন। মাত্র দেড় মাস আগে মাহমুদুল মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন।
জানা গেছে, ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে গতকাল বুধবার (২০ জুলাই) রাতে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন এডিসি খন্দকার লাবণী। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের বরালিদহ গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের মেয়ে। তার স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৭ জুলাই এক সপ্তাহের ছুটিতে লাবণী গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। গতকাল বুধবার লাবণী শ্রীপুর ইউনিয়নের সারঙ্গ দিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে অবস্থান করছিল। গভীর রাতে সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।
আরও পড়ুন : ছুটি নেই বেতনেও টান, অতঃপর আত্মহত্যা!
আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লাবণীর সঙ্গে তার স্বামীর কলহ চলে আসছিল। সংসারে আমার মেয়ে সুখী ছিল না। মূলত সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে লাবণীর বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর আত্মহত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইন্সের পুলিশ ব্যারাকের চার তলা ভবনের ছাদে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। ধারণা করা হচ্ছে- তিনি নিজের কাছে থাকা শর্টগানের গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। নিহত মাহমুদুল হাসান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদরের এজাজুল হকের ছেলে।
আত্মহত্যাকারী পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে লাবণীর অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল কি না- জানতে চাইলে খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, এ রকম কোনো বিষয় আমরা আজ পর্যন্ত শুনিনি।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ ও প্রশাসন কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুটি আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না সে বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। প্রাথমিকভাবে ঘটনা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বলেই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।
খন্দকার লাবণী ৩০তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান আগে তার দেহরক্ষী ছিলেন।
আরও পড়ুন : পুলিশের আত্মহত্যা : শুধুই কি সংখ্যা, মানসিক চাপ কেউ দেখছে?
দুপুর দেড়টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গের সামনে কথা হয় মাহমুদুল হাসানের দুলাভাই মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাহমুদুল মাঝে মাঝে বলত খুলনায় তার চাকরি করতে ভালো লাগছে না। তার অন্যত্র বদলি হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই মাহমুদুল বদলি হয়ে মাস দেড়েক আগে মাগুরায় আসে।
পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। আত্মহত্যার কারণও নিশ্চিত করতে পারেননি সেলিম উদ্দিন।
শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর আত্মহত্যার বিষয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার কারণ আমরা জানতে পারিনি। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
অপূর্ব মিত্র/আরএআর