সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল
সফলতার পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। পাঠদান পদ্ধতি, ফলাফল, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়টি এরই মধ্যে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এতে এক ধাপ এগিয়ে গেছে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষসহ আনন্দিত এলাকাবাসী। তবে সরকার দ্রুত বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নকে পরিপূর্ণ করবেন বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ূন আহমেদ তার নিজ গ্রাম নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী কুতুবপুরে তিন একর জায়গা নিয়ে ১৯৯৬ সালে এই স্বপ্নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এরপর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের করা নকশা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন স্কুলভবন নির্মাণের পর মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৬ সালে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। নিজ অর্থায়নে এবং পরিকল্পনায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি প্রায় সময়ই ছুটে আসতেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, পড়াশোনার খোঁজ-খবর নিতেন। স্কুলটি ঘিরে হুমায়ূন আহমেদের দেখা নানা রকম স্বপ্নের বর্ণনা তাদের শোনাতেন। কিন্তু এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান হুমায়ূন আহমেদ।
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পর তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওনসহ বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা নিরলস পরিশ্রম করে প্রত্যেকটি পরীক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে ৩৪২ জন শিক্ষার্থী ও ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন : হুমায়ূন আহমেদ : গল্প, গদ্য ও জনপ্রিয়তা
স্থানীয় উপজেলা-জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখায় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক এবং চলতি বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিভুক্ত করা হয়েছে স্কুলটি। সর্বশেষ জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও শতভাগ সফলতা অর্জন করে হুমায়ূন আহমেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়াবী বলে, হুমায়ূন স্যার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। এখানে স্যাররাও খুব আন্তরিক। পড়াশোনাসহ সব বিষয়ে নিয়মিত আমাদের খোঁজ-খবর রাখেন। আমিও স্বপ্ন দেখি এখানে পড়াশোনা করে হুমায়ূন স্যারের মতো একজন আলোকিত মানুষ হওয়ার।
একই শ্রেণির কাকলী রাণী শর্মা বলে, আমাদের স্কুলটা সাধারণত অন্য স্কুলের মতো নয়। এটা সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। খোলামেলা পরিবেশ, দৃষ্টিনন্দন স্কুলভবন, বড় খেলার মাঠ রয়েছে। আমাদের লাইব্রেরির মতো লাইব্রেরি অন্য কোনো স্কুলে নেই। আমরা হুমায়ূন স্যারকে দেখিনি। তবে লাইব্রেরিতে স্যারের অনেক বই পড়েছি।
শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, হুমায়ূন স্যার আমাদের বলতেন, ‘তোমরা দেখে নিও, এই বিদ্যাপীঠ এক দিন দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং এর সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তখন শহরের ছেলেমেয়েরাও এখানে লেখাপড়া করতে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, স্যারের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই তিনি মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে না ফেরার দেশে চলে যান। হুমায়ূন স্যারের সেসব কথা আজও আমাদের কানে বাজে। মনে হয় স্যার আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরা স্যারের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, হুমায়ূন স্যার তার হাতে গড়া এই স্কুলটি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজ ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছে। স্যারের বিদ্যালয়টি বর্তমানে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেরা প্রতিষ্ঠান। এক সময় বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সেরা হবে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, সরকারিকরণও হয়তো হবে। কিন্তু হুমায়ূন স্যার এসব দেখে যেতে পারলেন না। তবে আমরা মনে করি, স্যার সব সময় আমাদের সঙ্গে আছেন। হুমায়ূন স্যার যেমন তার সময়ে অদ্বিতীয় সাহিত্যিক ছিলেন, স্যারের প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠও বাংলাদেশে অদ্বিতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে ইনশাআল্লাহ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হুমায়ূন স্যার প্রথম মূলত ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে এটিকে সরকারি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে পরামর্শ দেই এবং সহযোগিতা করি। পাঠদানসহ সবক্ষেত্রেই বিদ্যালয়টি সেরা। হুমায়ূন স্যারের স্বপ্ন পূরণে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বলেন, হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ পাঠদানসহ সকল কার্যক্রমেই অত্যন্ত ভালো। এরই মধ্যে বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের এ স্কুলকে এগিয়ে যেতে যাবতীয় সহযোগিতা করে যাব।
জিয়াউর রহমান/এসপি