শান্তবাবুর জন্য নিয়েছেন ব্যাংকঋণ, হাটে নেওয়ারও পয়সা নেই
কোরবানির আর মাত্র দুদিন বাকি। অথচ রাজশাহীর কৃষক আলিম উদ্দিনের ৩৩ মণ ওজনের বিশালদেহী ষাঁড় শান্তবাবুর জন্য কোনো ক্রেতা মিলছে না। গরুটিকে হাটে তুলবেন, সেই পয়সাও নেই আলিম উদ্দিনের কাছে। তাই ঋণ ও বন্ধক দেওয়া জমি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন হতদরিদ্র এ কৃষক।
প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা এলাকার নিম্নবিত্ত কৃষক আলিম উদ্দিন তার প্রিয় ষাঁড় শান্তবাবুকে লালন-পালন করছেন। কোরবানিতে বেচে ঋণ শোধের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। কোরবানিতে বেচতে না পারলে শান্তবাবুকে খাওয়াবেন কী, বাড়বে ব্যয়, এ নিয়ে মহাচিন্তায় আলিম উদ্দিন।
আলিম উদ্দিন জানান, শান্তবাবুকে পালতে গিয়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। বন্ধক রেখেছেন ধানি জমি। গোখাদ্যের দোকানে বকেয়া রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। করোনার কারণে গত দুই বছর শান্তবাবুকে বেচতে পারেননি।
শান্তবাবু তার গোয়ালেরই বাছুর। শান্তশিষ্ট স্বভাবের হওয়ায় নাম রেখেছেন শান্তবাবু। একেবারেই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এটি বড় করেছেন তিনি। কোরবানিতে বিক্রি করে ভালো টাকা লাভের আশায় ছিলেন।
মোটের উপর দুই বিঘা জমি তার। এখন দিনে তার আহার ৬০০ টাকার। শান্তবাবুর পেটে খাবার জোগাতে শেষে নিজের দেড় বিঘা ধানি জমি বন্ধক রাখেন। শান্তবাবু বিক্রি না হলে নিজের পেটেই টান পড়বে। হয়তো একসময় বন্ধক দেওয়া জমি ফিরিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু ব্যাংক ঋণ কি করে শোধ করবেন এই দুশ্চিন্তায় আলিম উদ্দিন।
আলিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে শান্তবাবুকে হাটে তুলব, সে পয়সাও নেই। আবার গোলালে রেখে তাকে খাওয়াব, সেই সংগতিও নেই। বাড়িতে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা এসে দেখে গেছে। আমি দাম চেয়েছিলাম ১২ লাখ টাকা। কিন্তু কেউ তেমন দাম বলেনি।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি ভিডিও কলে দেখেছেন। পছন্দ করে দাম বলেছিলেন ৭ লাখ। আমি ১০ লাখ চেয়েছিলাম। দরদামে হয়তো কিছুটা চাড়তাম। কিন্তু ক্রেতা পরে আর সাড়া দেননি। এবারও কোরবানিতে শান্তবাবু বিক্রির কোনো আশা দেখছি না আমি।
গত বছর কোরবানিতে বিক্রি না হওয়ায় এলাকার লোকজন শান্তবাবুকে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আলিম উদ্দিন কসাইয়ের কাছে বেচতে চান না। কারণে তিনি কোরবানির উপযুক্ত করে শান্তবাবুকে লালন-পালন করেছেন। দুটি টাকা লাভের আশায় অপেক্ষায় ছিলেন।
তবে এবার বিক্রি না হলে কী করবেন, তা আর ভাবতে পারছেন আলিম উদ্দিন। তবে তিনি এখনো আশাহত নন। শেষ পর্যন্ত কেউ না কেউ শান্তবাবুকে কিনে নেবেন বলেই তার বিশ্বাস।
শান্তবাবুর পরিচর্যায় সমান পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আলিম উদ্দিনের স্ত্রী সালমা বেগমও। তিনি বলেন, শান্তবাবুকে সবুজ ঘাস, খড়, গাছের পাতা, ভুট্টা ভাঙা, বিভিন্ন ভুসি, সরিষার খৈল, ধানের কুড়া ও বিভিন্ন পাকা ফল খাওয়াই। এই গরু লালন-পালন করতে গিয়ে আমাদের কয়েক লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছে। গরুটি বিক্রি না হলে সেই ঋণ কীভাবে শোধ হবে, এ চিন্তায় ঘুম আসে না।
পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জান্নাতুন ফেরদৈাস বলেন, লোকমুখে শুনে কিছুদিন আগে ওই ষাঁড়টি দেখতে গিয়েছিলাম। সাদা-কালো মিশ্রণে প্রায় ৬ ফুট উচ্চতা ও সাড়ে ৯ ফুট দৈর্ঘ্যের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৩ মণ হতে পারে। গরুটিকে সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। গরুটি বিক্রি না হলে ওই কৃষকের আরও ব্যয় বাড়বে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এনএ