এবার সেই কলেজ থেকে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেলেন ৩১ জন
এবার নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একসঙ্গে ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ২০২১-২২ ব্যাচের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন ছেলে ও ৫ জন মেয়ে রয়েছে।
চলতি বছর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) মোট ২৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৬৫ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪৯ জন। এছাড়া এই ব্যাচ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী বুয়েটে, ৩৯ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ফলে সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, সৈয়দপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। বরাবরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে এক ব্যাচের ৩১ জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া এই ব্যাচ থেকে এ বছর ৩৯ জন মেডিকেলে ও ১৬ জন বুয়েটে সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই অর্জনে আমরা গর্বিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের গ্রিন-ক্লিন লার্নিং পদ্ধতিতে পড়ানোর চেষ্টা করি। এতে সবার মাঝে প্রতিযোগিতা ও মননশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছ। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরি করি। ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণ পাঠদান সম্পন্ন করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা হয়। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ দেওয়া হয় না।
অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছরই আমাদের ভালো করার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে। আমরা সেভাবেই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে থাকি। করোনাকালে আমরা মুখোমুখি ক্লাস নিতে পারিনি। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। নিয়মিত তদারকি ছিল। এ ব্যাপারে ভালো সহযোগিতা পেয়েছি অভিভাবকদের। শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা ধারাবাহিক সাফল্য দেখাতে পারছি।
ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নুর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহর রহমত, বাবা মায়ের দোয়া আর শিক্ষকদের সঠিক দিক নিদের্শনায় ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য যে কতটা আনন্দের, তার ভাষা আমার জানা নেই। তবে অনেক ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু সেখানে মেধাতালিকায় পেছনে থাকার কারণে এখন ঢাবির কম্পিউটার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে চাই।
প্রসঙ্গত, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের পূর্বের নাম ছিল সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় (টেকনিক্যাল কলেজ)। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নাম রাখে। কলেজটিতে কেবলমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়।
কলেজটি থেকে প্রতি বছর উত্তীর্ণ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের নাম রয়েছে।
শরিফুল ইসলাম/এসপি