শান্ত স্বভাবের সম্রাট নজর কাড়ছে সবার, দাম ১৮ লাখ
সাদা, লালচে আর বাদামি রঙের মিশ্রণ। যেমন গঠন, তেমন স্বাস্থ্য। মুখ আর ঘাড়ের কয়েকটি স্থানে কালো রঙের ছাপ। অনেকটা শান্ত স্বভাবের। দেখতে যেমন চমকপ্রদ, নামও তেমন আকর্ষণীয়। সবাই ডাকে সম্রাট বলে। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করা গরুর নাম। গরুটি দূর থেকেই নজর কাড়ছে সবার।
শুধু সম্রাট নয়, এই ফার্মে রয়েছে ট্রাম্প, নবাব, ডন, বাদশা, টাইটেন, জেমস, কালুসহ বাহারী নাম আর রঙের ৬৫টি গরু। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের মধুমতি ডেইরি ফার্মে এসব গরুর দেখা মেলে। এবারের ঈদে কোরবানির জন্য ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে সম্রাট সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।
ফার্মের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মালিকের ভাইয়ের ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফার্মটি আমার চাচা শামীম শেখের। আমি তার বড় ভাইয়ের ছেলে। আমি নিজেসহ বেশ কয়েকজন ফার্মটি দেখাশোনা করি। কিছু কর্মচারী রয়েছে। এই খামারের শুরুতে সাড়ে ৩-৪ বছর আগে ১৪টি গরু আনা হয়। এখন চার প্রজাতির ৬৫টি গরু রয়েছে খামারে। এই সময়ের মধ্যে আরও ৫-৬টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। এটি দুগ্ধ খামার। এখানে চার প্রজাতির মধ্যে রাণীশংকর, ফ্রিজিয়ান, ভারতীয় ও দেশি গরু রয়েছে।
তিনি বলেন, এবার কোরবানি ঈদের জন্য ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে আকার-আকৃতি, গঠন, রঙ, স্বভাব, চেহারা সব দিক থেকে আকর্ষণীয় হচ্ছে সম্রাট। এটি রাণীশংকর জাতের গরু। যে কারোরই পছন্দ হবে। এর দাম ১৩ লাখ টাকা বলেছিল একজন। কিন্তু আমরা ২৫ লাখ টাকা বলেছি। আশা করছি হাটে নেওয়ার পরই বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, খামার করে আমরা সফল হয়েছি। ১৪টি গরু থেকে এখন খামারে ৬৫টি গরু রয়েছে। শুরুতে আনুমানিক ব্যয় হয়েছিল ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা। এখন খামারে প্রায় দেড় কোটি টাকার গরু রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরা সাধারণ খাবারই খায়। গমের ভুসি, সয়াবিনের খৈল, ধান ও ভুট্টার কুড়া খেয়ে থাকে। এর সঙ্গে দুপুরে নিজেদের ফার্মেই উৎপাদিত ঘাস খাওয়ানো হয়।
ফার্মের কর্মচারী জাফর ভুইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ফার্মের শুরু থেকে এখানে কাজ করি। গরুগুলোকে সাধারণ খাবার খাওয়ানো হয়। আর দুধের গরুগুলোকে এসব খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের ওষুধ খাওয়ানো হয়। খাবারের সঙ্গে আয়োডিনযুক্ত লবণ দেওয়া হয়। এসব খাবার দুই বেলা আর এক বেলা ঘাস খেতে দেওয়া হয়।
ফার্মের মালিক শামীম শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য এবার ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে মূল আকর্ষণ হচ্ছে সম্রাট আর ট্রাম্পের। এই দুটি গরু দেখতে যেমন সুন্দর, গঠনও চমৎকার। এর মধ্যে সম্রাটের ওজন সাড়ে ২৭ মণ হবে। আর কালো রঙের ট্রাম্পের ওজন ২৬ মণ হবে। গরুগুলো গাবতলীর হাটে নেওয়া হবে। আকর্ষণীয় গরু দুটির দাম ৩২-৩৩ লাখ টাকা বলে প্রত্যাশা করছি। যার মধ্যে সম্রাট ১৭-১৮ লাখ এবং ট্রাম্প ১৫-১৬ লাখ টাকা। বাকী গরুগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হবে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত দিনে কোরবানির জন্য ৮০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। এ বছর তার চেয়ে কিছু বেশি হবে। কারণ করোনার প্রভাব না থাকার কারণে আমরা সকল উৎসবে দেখছি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, এবার কোরবানির ঈদ আনন্দময় হবে।
তিনি বলেন, এবার ৭ হাজার ৬১৪ জন খামারি ২৩ হাজার ৯১৭টি গরু কোরবানির জন্য পালন করছে। এছাড়া মহিষ ১৭টি, ছাগল প্রায় ৯৩ হাজার ও ভেড়া ২ হাজার ৩৫০টি পালন করছে। খামারির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেইসঙ্গে কোয়ালিটিও বাড়ছে। অনেকেই এখানে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করছে। তারা ভাবছে, এখানে প্রাণিসম্পদে লাভ আকাশচুম্বী না হলেও লাভ অবশ্যই আছে। এই সময়ে মৌসুমি কিছু খামারিও গরু প্রস্তুত করে। বরাবরই তারা লাভ পেয়ে আসছেন। এবারও তারা লাভ পাবে। বেকার যুববকরা অনেক বিনিয়োগও করছে।
এসপি