‘গরু নিয়ে এত দ্রুত পার হতে পারব কখনো ভাবিনি’
‘যশোর থেকে গরু নিয়ে ঢাকা যেতে হলে আগে দুই থেকে তিন দিন পার হয়ে যেত, কখনো কখনো গরু মারা যেত। এখন দ্রুত আসলাম। ভোগান্তি ছাড়াই এত দ্রুত পার হতে পারব ভাবিনি।’
শুক্রবার (১ জুলাই) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন যশোর থেকে গরু নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার দিকে যাওয়া গরু ব্যবসায়ী আক্কাস মিয়া।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যশোর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলা থেকে গরু নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যান ব্যবসায়ীরা। তাদের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, নরসিংহপুর চাঁদপুর ফেরি ঘাট পারাপার হতে হতো। যানজটের কারণে ঢাকায় ঢুকতে তাদের দুই থেকে তিন দিন পার হয়ে যেত।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর টোল প্লাজায় নেই কোনো যানজট নেই। গাড়ি আসলেই টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গরুবাহী গাড়ির কোনো সিরিয়াল নেই।
গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের আগে ঢাকার বাজার ধরতে হলে ঝুঁকি নিয়ে আসতে হত। গরু লালনপালন করে বাড়ি থেকেই ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হত। কারণ গরু একটু এদিক সেদিক হলেই মারা যায়। তাই ঝুঁকিতে যেতাম না। যে যেই দাম বলত সেই দামেই গরু বাড়ি থেকে বিক্রি করে দিতাম। এতে গরু লালনপালন করে তেমন লাভ হতো না। তবে এবার পদ্মা সেতু হওয়াতে ঢাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে গরু নিয়ে যেতে পারছি। আর যেই ঝুঁকি ছিল তাও নেই।
যশোর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী লুৎফর বয়াতি বলেন, আমি এই রুটে নতুন না। ৩০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করি। ফেরি ছাড়া যাওয়ার কোনো রাস্তা আমাদের ছিল না। হয়ত পাটুরিয়া বা শিমুলিয়া অথবা চাঁদপুর ঘাট আমরা ব্যবহার করতাম। এতে এলাকা থেকে গরু কিনে ঢাকায় যেতে যেই সমস্যা হতো, তার থেকে বেশি সমস্যা হতো ফেরি ঘাটে। দিনের পর দিন বসে থাকতে হতো। আবার গরম পড়লে গরু অসুস্থ হয়ে মারাও যেত। পদ্মা সেতু হওয়াতে এখন আর সেই সমস্যাটি হবে না। আসব আর পদ্ম সেতু পার হয়ে চলে যাব। পুরো রাস্তায় কোথাও কোনো যানজট পড়িনি।
গরু ব্যবসায়ী রাজন হোসেন বলেন, প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫টা গরু আমার নিজের পালে হয়। সেগুলো আমি ওখান থেকেই বিক্রি করে দিতাম। অনেক ঝামেলা হতো গরু নিয়ে ঢাকা বা অন্য কোথাও যেতে। কিন্তু এবার পদ্মা সেতু হওয়াতে গরু নিয়ে আমি নিজেই ঢাকায় যাচ্ছি। আশা রাখি ভালো ব্যবসা হবে। এগুলো বিক্রি করতে পারলে আগামী বছর আরও বেশি গরু লালনপালন করব।
কেরানীগঞ্জের আসলাম হোসেন বলেন, প্রতিবছর ঢাকা থেকে গরু কিনে কোরবানি দিতাম। এবার তা না করে বরিশালে আমার বন্ধুর কাছ থেকে দেশি গরু কিনে এনে কোরবানি দিব। তাই গরু কিনে এখনই ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। আগে এটা ভাবতেই পারতাম না। এবার পদ্মা সেতু হওয়াতে দেশি গরু দিয়ে কোরবানি করব।
পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টের টোল ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে যানজট নেই। নিরবচ্ছিন্নভাবে পার হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। প্রতিদিনই গরুর গাড়ি আসছে। টোল দিয়েই পার হয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর