গরুগুলো বিক্রি করতে পারলে বাঁচি
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় জাহিদ এগ্রো ফার্মে কোরবানির জন্য দীর্ঘ চার বছর ধরে লালনপালন করে চারটি গরু প্রস্তুত করেছেন খামারি অলিউর রহমান। কিন্তু এই কোরবানিতে চারটি গরু বিক্রি করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে জাহিদ এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, জেসান ,হারলি, রাজা ও নবাব নামে চারটি গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি অলিউর রহমান। খামারের ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গরু জেসান ও হারলি। সাদার ওপর হালকা কালো রংয়ের দুটি গরুর বয়স প্রায় চার বছর। চার দাঁত, ওজন এক হাজার কেজি। ব্রাহমা জাতের গরু রাজা ও নবাব। এই দুটি গরু হালকা লাল ও সাদা রংয়ের। রাজা নামের গরুটির ওজন ৭৫০ কেজি। সাদা ও মাথায় হালকা কালো রংয়ের নবাবের ওজনও ৭৫০ কেজি। গরু দুটির বয়স চার বছর ও ছয় দাঁত। চারটি গরুকে ঘিরে খামারের মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে আলাদা আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বিশাল দেহের গরু চারটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে খামারে ভিড় করছে মানুষ।
জাহিদে এগ্রো ফার্ম নামে ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে গরু চারটি বিক্রির জন্য পোস্ট দেওয়া হয়েছে। ক্রেতারা সেখান থেকে দেখে খামারে এসে গরু দেখে দাম দর করে যাচ্ছেন। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরাও ভিড় করছেন খামারে। কিন্তু দাম দরে না মেলায় বিক্রি হচ্ছে না চারটি গরু।
খামারে গরু দেখতে আসা আব্দুর রউফ নামে নামে এক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের মুখে শুনে অলিউর ভাইয়ের খামারে গরু দেখতে এসেছি। আগে টিভিতে দেখতাম বড় বড় গরু, এখন আমাদের গ্রামেই বড় বড় গরু দেখতে পাচ্ছি।
জাহিদ এগ্রো ফার্মের পরিচালক অলিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় এসে দুটি গরু দিয়ে খামার শুরু করি। এখন খামারে মোট ১৯টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে চারটি গরু এবারের কোরবানির জন্য সম্পূর্ণ হালাল উপায়ে দেশীয় খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করেছি। আমার ফার্মের যে বাচ্চাগুলো হয় সেখানে থেকে এই চারটি গরু চার বছর ধরে লালন-পালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে গরু চারটি বিক্রি করব, কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না। গরু চারটি বিক্রির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু কেনার মতো গ্রাহক পাচ্ছি না। এই গরুগুলো ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ঢাকায় নিয়ে গিয়ে গরুগুলো বিক্রি করার মতো পরিবেশ নেই হাটে। বিভিন্ন সমস্যা তো আছেই আবার রাস্তায় চাঁদাবাজি। অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই খামার থেকে গরুগুলো ছেড়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, খামারের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গরু জেসান ও হারলির ওজন এক হাজার কেজি। দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা। এ গরু দুটি সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ হলে ছেড়ে দিব। আর ব্রাহমা জাতের রাজা ও নবাব নামে দুটি গরু হালকা লাল ও সাদা রংয়ের গুরু দুটির ওজন ৭৫০ কেজি। দাম চাচ্ছি ১০ লাখ টাকা। ৭ লাখ টাকা হলে ছেড়ে দিব। কেউ যদি আমার গরুগুলো কেনেন, তাহলে আমি হোম ডেলিভারি করে বাসায় পাঠিয়ে দিব। গরু দেখাশোনা ও কসাইসহ কোরবানি করা পর্যন্ত লোক পাঠিয়ে দিব। গরুগুলো বিক্রি করতে পারলে বাঁচি।
জানা গেছে, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ১০০টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৯টি এবং ছাগল-ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ৭২হাজার ২৩১টি। জেলায় ছোটবড় সব মিলিয়ে গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। এ জেলায় মোট পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ২৪৮টি। চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ২৮ হাজার ৮৫২ টি।
এদিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন খামারিরা। তবে খাবারের দাম বেশি থাকায় গরু লালনপালনে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে গরুর দাম নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। অপরদিকে অনলাইনের যুগে অনেকে খামারগুলোতে গিয়ে গরু দেখছেন ও কিনছেন। গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংসহ ভারতীয় গরু যাতে না ঢুকে, সেবিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন খামারিরা।
দিনাজুপর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খামারিদের নিরাপদ উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণে সব রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও খামারিরা এ জেলায় যে পরিমাণে পশু প্রস্তুত করেছেন, তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইমরান আলী সোহাগ/আরএআর