সিরাজগঞ্জে ৬০৯২ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৬০৯২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বাড়ায় জেলার করতোয়া, ইছামতি, ফুলঝোড়, বড়াল, হুড়াসগড় ও চলনবিলের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় একদিকে যেমন জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে অন্যদিকে এসব এলাকার জমির ফসল প্লাবিত হচ্ছে। এই ফসলের বেশিরভাগ অংশই নষ্ট হওয়ার পথে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ২২ জুন (সকাল ৬ টায়) জেলার কাজীপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৬ হাজার ৯২ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, তিল, কাউন, বাদামসহ উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হবে। সরকারি অনুদান পেলে তাদের সেই অনুযায়ী দেওয়া হবে।
এদিকে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার শ্রমজীবীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই। বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় এখনো শুরু হয়নি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণ।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা ইতোমধ্যে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। জেলার চৌহালী উপজেলায় গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা শুরু হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে সব জায়গাতেই বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ইতোমধ্যে ১৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছি। ইতোমধ্যে চৌহালীর জন্য ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যসহ অন্যান্য শুকনো খাবার মজুত আছে।
তিনি ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যে ৯১১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে থেকে ১৪০ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বাকিগুলো এখনও মজুত আছে। পর্যায়ক্রমে এগুলোও বিতরণ করা হবে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এরপর পানি কমবে। এখনো বন্যার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চৌহালী, কাজীপুর, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বন্যায় ভাঙন রোধসহ সকল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
শুভ কুমার ঘোষ/এসপি