ডাকাত আতঙ্কে ভোর পর্যন্ত চলে পাহারা
বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জ পৌর শহরে রাত হলেই নেমে আসে ডাকাত আতঙ্ক। শনিবার রাত থেকে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার পুরোপুরি সুনামগঞ্জ শহর ডুবে যাওয়ার পর থেকে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে এ আতঙ্ক বেড়ে যায়।
চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পৌর এলাকার ষোলঘর, বিলপার, পশ্চিম হাজী পাড়া, জামতলা, পশ্চিম তেঘরিয়া, বাগানবাড়ি, হাছননগর, আরপিননগরসহ প্রায় সব পাড়া মহল্লায় অধিকাংশ বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সারারাত জেগে পাহারা দেন। মঙ্গলবার (২২ জুন) রাতেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
হাতে টর্চ লাইট ও লাঠি নিয়ে রাতে তারা বাড়ির ছাদে কিংবা চালের ওপরে বসে থাকেন। কিছুক্ষণ পর পর সাবধান, হুঁশিয়ার, জেগে আছি বলে হাঁক দেন। যেসব এলাকার পানি এখন নেমে গেছ, সেসব এলাকার তরুণরা একত্রিত হয়ে পাহারা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, বন্যার প্রথম দিনে মোবাইলে নেটওয়ার্ক ছিল না। যোগাযোগহীন হয়ে পড়ে শহরবাসী। সেই সুযোগে রাতে নৌকা নিয়ে সক্রিয় হয় চোর-ডাকাতের বেশ কয়েকটি গ্রুপ। কয়েকটি জায়গা থেকে চুরি-ডাকাতির অভিযোগ আসে। পরে বিভিন্ন মসজিদ থেকেও মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন।
শহরের ষোলঘর এলাকার এনামুল হক জুবের ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকজন যুবক মিলে প্রতি রাতে পাহারা দিই। প্রত্যেক ছাদেও দু-একজন পুরুষ সদস্য লাইট হাতে বসে থাকেন। চোর-ডাকাত এলে যেন তাদের ঠেকানো যায়, সেজন্যই সবাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
বড়পাড়া এলাকার বাপ্পী আহমেদ বলেন, সকাল হলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সারারাত লাঠি হাতে আমরা কয়েকজন মিলে এলাকায় হাঁটি, যেন কোনো কিছু ঘটার আগেই মোকাবিলা করতে পারি।
পশ্চিম তেঘরিয়া এলাকার আরিফ আহমেদ বললেন, প্রত্যেক রাতে না ঘুমিয়ে পাহারা দিতে হয়। এ ছাড়া কিছু করার নেই। পানির জন্য চারিদিক বন্ধ। বিপদে পড়লে এসে বাঁচানোর মতো সুযোগ নেই কারো। পানি ভেঙে পুলিশ আসতে আসতে লুট হয়ে যাবে সবকিছু।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম দিকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ। এখনো অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। সেজন্য আমরা নৌকায়, হেঁটে যেভাবেই হোক টহল জোরদার করেছি। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে তারাও আমাদের সহযোগিতা করছেন।
সোহানুর রহমান/আরএইচ