পতিত জমিতে ড্রাগন চাষে লাখপতি নোয়াখালীর শিক্ষক
গল্পের শুরুটা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বাড়ির পাশে ৫ শতাংশ পতিত জমিতে ১৬০টি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। সেই ড্রাগন ফল থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। তিনি হলেন নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৫ শতাংশ পতিত জমিতে ড্রাগন চাষাবাদ করেন তিনি। ড্রাগন চাষের শুরুতে পরিচর্যাজনিত সমস্যার কারণে ২০২১ সালে অল্প পরিসরে ফল পেলেও এবার বাগানজুড়ে শুধু ফল আর ফল।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ ফুট উচ্চতার খুঁটিতে পেঁচিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লাল বারী-১ জাতের ড্রাগন ফলের গাছ। বর্তমানে বাগানে প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে লাল রংয়ের ড্রাগন ফল। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ড্রাগন ফলের চাষ-পদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন। আর যারা শখের বসে ড্রাগন চাষ করতে চাচ্ছেন তাদেরকে তিনি চারা সরবরাহ করছেন।
অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বেকার যুবকদের জন্য একটা ক্যাম্পেইন করি। পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য নিজে ৫ শতাংশ পতিত জমিতে ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করি। এ বছর যে ফল হয়েছে তাতে আমি ১ লাখ টাকার ফল পাব। এছাড়া বাগানে বেগুন, কাঁচা মরিচ, আম, মাল্টা, সিডলেস পেয়ারা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে বেকার যুবকরা কৃষি কাজে আসলে দেশ ও ব্যক্তি উপকৃত হবে। কৃষি ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। কৃষি কাজে বর্তমানে ফলজ হিসেবে ড্রাগন খুব জনপ্রিয়। দেশীয় জাত হওয়ায় এটি যেমন লাল তেমন রসালো। সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদা বেশি। একটা গাছে প্রথম লটে ১০/১২টা করে ফল এসেছে।
আফতাব উদ্দিন আরও বলেন, ড্রাগন ফলে পরিচর্যা কম লাগে। পোকামাকড় ধরে না। একবার রোপণ করলে কমপক্ষে ৩০ বছর ফল পাওয়া যাবে।
উত্তম কাজে আখিরাতে সাদাকাহ পাওয়া যায় উল্লেখ করে আফতাব উদ্দিন বলেন, বাচ্চাদের পড়ানো, গাছ লাগানো, কৃষিকাজ হলো উত্তম কাজ। এগুলো আখিরাতে ভালো ফসল দিবে, সাদাকাহ হবে। ইংল্যান্ড থেকে এসে নোয়াখালীতে স্কুল করি, কলেজ করি। হাজারো বাচ্চাদের পড়াচ্ছি কিন্তু বেশিরভাগ বেকার থাকছে অথবা অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে চাকরি নিচ্ছে যা আমার ভালো লাগে না। তাই নিজে কৃষি কাজে আসলাম এবং বাচ্চাদেরও পথ দেখালাম। আমি মনে করি এর সুফল আখিরাতে পাব।
কৃষিকাজে প্রশান্তি আসে উল্লেখ করে অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন বলেন, বাগান করে আমি প্রশান্তি পাই। আমি চাই সবাই বাগান করুক। কোনো না কোনো ফসল চাষ করুক। জমি পতিত না রেখে দেশি-বিদেশি ফল চাষ করুক যেন আমদানি করতে না হয়। আমাদের দেশে চার লাখ মসজিদ আছে। এসব মসজিদের ৫ শতক করে পতিত জমি আছে। এগুলো একত্র করলে ২০ হাজার একর জমি হয়। তেমনি মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, স্কুল, মাদরাসা, সরকারি দপ্তর আছে। এগুলো চাষের আওতায় আনলে আমরা আড়াই লক্ষ একর জমি পাব। এই জমিগুলো যদি কোনো না কোনো খাবারেরসিঙ্গে যোগ হয়, তাহলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। যতই দুর্যোগ আসুক আমাদের খাবারের সংকট হবে না ইনশাআল্লাহ।
নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড্রাগন মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ ফল। এটা বর্তমানে বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে বিভিন্ন জাতের চারা আনা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাত বারি ড্রাগন ফল-১ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায়, শাঁস গাঢ় গোলাপি রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির। ফলের বীজগুলো ছোট ছোট, কালো ও নরম হয়। একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, পতিত জমিতেও ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও খামারিদের বিদেশি ফল চাষের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারলে একদিকে যেমন বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে, তেমনি ফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। এছাড়া নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। সরকারিভাবেও ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
হাসিব আল আমিন/এসপি