জমকালো আয়োজনে দিনাজপুরে ৪০ এতিম মেয়ের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা
দিনাজপুরে শিশু নিকেতনের ৪০ জন এতিম মেয়ের জমকালো বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৭ মে) দুপুরে শহরের গ্রীন ভিউ কনভেনশন সেন্টারে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব পরিচালিত দিনাজপুর শিশু নিকেতন (বালিকা এতিমখানা) ১৯৭৯ সাল থেকে এতিম কন্যা শিশুদের নিয়ে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি এতিম কন্যা শিশুদের আবাসন, পড়াশোনাসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকে। শিশুশ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার সকল ব্যবস্থা করে। শুধু তাই নয়, এসব মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাও করে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭৪ জন মেয়েকে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ মে) এমনি একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের এখন পর্যন্ত বিয়ে হওয়া ৪০ জন মেয়ের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আলোকসজ্জা, গেট, স্টেজ , ভিডিও, ব্যান্ডপার্টি কোনো কিছুরই কমতি ছিল না দিনাজপুর শহরের গ্রীন ভিউ কমিউনিটি সেন্টারে। কমিউনিটি সেন্টারকে সাজানো হয়েছিল রং-বেরংয়ের বেলুন দিয়ে। দুপুরে একসঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত প্রায় ১২শ অতিথির মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, এতিমরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তারা আমাদের স্বজন। তারা যেন নিজেদের অসহায় মনে না করে এজন্য লায়ন্স ক্লাব তাদের দায়িত্ব নিয়ে বাবা স্নেহেই লালন করে। তাদের শুধু ভরণপোষণের দায়িত্বই নেওয়া হয় না, জমকালো আয়োজন বিয়েও দেওয়া হয়। তারা যেন নিজেদের এতিম মনে না করে, তাদের মনে মা-বাবা না থাকার কষ্ট যেন না থাকে, এজন্য বরাবরই জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়ে থাকে। করোনা মহামারির কারণে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হওয়ায় একত্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বর-কনে ও তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় দেড় হাজারের মতো অতিথি অংশ নেন। তাদের সবার জন্য খাবার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এতিম মেয়েরা যেন সুন্দরভাবে চলতে পারে সেজন্য অনুষ্ঠানে তাদের সেলাই মেশিন, বাইসাইকেল, গৃহস্থালি সামগ্রী, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহারও দেওয়া হয়।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ফলের দোকান রয়েছে। বিনা যৌতুকে শিশু নিকেতনের এতিম মেয়ে লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আজকে আমার মত ৪০ জন ভাই যৌতুক না নিয়ে এতিম মেয়েদের বিয়ে করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন সুখী হতে পারি সকলের কাছে দোয়া চাই।
শিশু নিকতনের মেয়ে মৌসুমী বলেন, অনেক কষ্ট হচ্ছে ১০ বছর থেকে এখানে বড় হয়েছি। কোন দিন বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। আজ সুন্দর অনুষ্ঠান করে আমাদের বিবাহের আয়োজন করেছে সব মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভালো লাগছে।
দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব, শিশু নিকেতন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন এম এ মজিদের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিশু নিকেতনের সভাপতি লায়ন মোজাফ্ফর আলী মিলন, জেলা প্রশাসক খালিদ মাহমুদ জাকি
ও দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মিজানুর রহমান মুন্না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, অনুষ্ঠানে আমরা যারা উপস্থিত আছি, তাদের অনেকেই যৌতুকবিহীন বিয়ে করিনি। কিন্তু আজকে এখানে যে ৪০ জন যুবক তাদের নতুন জীবন শুরু করছেন, তারা কিন্তু যৌতুক ছাড়াই তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করছেন। এটা সমাজের জন্য দারুণ মেসেজ। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত শিশু নিকেতন। এখানে ১০১ জন এতিম কন্যা শিশুকে লোখাপড়ার পাশাপাশি হাতের কাজ, সেলাই এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪০ জন এতিম কন্যার আজ উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ে দেওয়া হলো। ৪০ জন পাত্র ছিলেন দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার। পাত্ররা কেউ ব্যবসায়ী,কেউ গার্মেন্টস চাকরি করেন, কেউ কৃষিকাজ করেন।
ইমরান আলী সোহাগ/আরএআর