বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর্ভোগে সিলেটের মানুষ
টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের কারণে তিন দিন ধরে সিলেটে এখন বন্যা। বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট নগরী এখন পানিতে টইটম্বুর। পানির নিচে রাস্তাঘাট, বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করাসহ বিভিন্ন দুর্ভোগে জর্জরিত সিলেটের মানুষ। এবার নতুন করে শুরু হয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।
তাই মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীর ছড়ারপার এলাকার বাসিন্দা মাসুম মিয়া প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘হায় রে পানি! ও পানি, তুই আমরারে (আমাদের) আর কত জ্বালাইবি। তুই এমনেও মারছোস, অমনেও মার রে।’
তিনি আরও বলেন, তিন দিন থেকে এমনিতেই ঘরে হাঁটুপানি নিয়ে কোনোমতে আছি। বসতভিটা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছি না। দুই দিন ধরে জমানো পানি দিয়েই কোনোমতে খেয়ে বেঁচে আছি। এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করতে হচ্ছে।
সিলেট নগরীর লালদিঘিরপার, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, মেন্দিবাগ, যতরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছেন মানবিক টিম সিলেটের সদস্যরা। বোতলভর্তি পানি ভ্যানগাড়িতে করে তারা বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করছেন।
এ বিষয়ে মানবিক টিমের প্রধান সমন্বয়ক শফি আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুর থেকেই অনেকেই বিশুদ্ধ পানির জন্য আমাকে ফোন করছেন। আমি আমার সাধ্যমতো বোতলের বিশুদ্ধ পানি নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জোর দাবি জানান।
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায়ও একই অবস্থা বিরাজমান। বন্যার কারণে বেশির ভাগ এলাকার গভীর নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রাম ইতিমধ্যেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপ থেকে ঘোলা পানি বের হচ্ছে। অনতিবিলম্বে এসব এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় মানুষ যদি বিশুদ্ধ পানি পান করতে না পারে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দেখা দেবে। ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরার মতো ভয়াবহ রোগ দেখা দিতে পারে। বন্যার এই কঠিন সময়ে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার ডা. রায়হান মাহমুদ বলেন, বন্যার এই সময়ে বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি যথাসম্ভব ফুটিয়ে পান করতে হবে। অনেক সময় ফোটানো পানিতেও নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে যায়। তাই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই।
সিলেট জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সব উপজলায় বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঁচ লাখ ট্যাবলেটের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১২০০ জেরিকন, ৯০০ ট্যাপসহ বালতি, ৫৫০ স্যানিটারি ন্যাপকিন, ৫০০ বসার টুল বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি উপজেলায় ১৫ সেট নলকূপ করার জন্য উপকরণ উপজেলা ভান্ডারে রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট জেলা অফিসে রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে তা নেওয়া হবে।
মাসুদ আহমদ রনি/এনএ