কোরআন বিতরণ করে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ পরিদর্শক
মুসলিম জাতির ধর্মীয় গ্রন্থ হলো আল কোরআন। এ গ্রন্থের প্রতিটি বাণী শীতল করে মানুষের প্রাণ। যেমন মুসলিম ভালোবাসেন এই গ্রন্থ, তেমনি আকৃষ্ট করে অন্য ধর্মালম্বীদেরও। আর এই কোরআন মাজিদ নিয়মিত বিতরণ করে প্রশংসায় ভাসছেন এক পুলিশ পরিদর্শক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাকারিয়াস দাস গত তিন মাসে মসজিদ, মাদরাসা ও দরিদ্রদের মাঝে দেড় শতাধিক কোরআন মাজিদ বিতরণ করেছেন। পবিত্র এ গ্রন্থ কোনো শিক্ষার্থীর কাছে থাকলে তিনি ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠবেন বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি অন্য ধর্মগ্রন্থও এভাবে বিতরণ করেন।
তার প্রশংসা করতে গিয়ে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ আক্কাস উদ্দিন বলেন, সচরাচর ভিন্নধর্মীদের কোরআন বিতরণ করতে দেখা যায় না। আমরা জেনে এসেছি ইসলামের শত্রুতা করে অন্য ধর্মের মানুষ। কিন্তু একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও তিনি নজির রেখে গেলেন। অনেক মুসলিমও এভাবে ইসলামের সেবা করেন না। আমি তার উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনা করি।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন উপহার পেয়ে শিক্ষার্থী আল-আমীন বলেন, আমি পুরাতন ও ছোট অক্ষরের কোরআন পড়ছিলাম। বড় অক্ষর ও নতুন কোরআন মাজিদ হলে আমার সুবিধা হয়। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন পুলিশ স্যার।
তিনি আরও বলেন, আমি এই প্রথম ইসলামের প্রতি কোনো ভিন্নধর্মীর ভালোবাসা দেখেছি। শুধু তা-ই নয়, তিনি প্রকৃত মানুষের ভূমিকা পালন করছেন। আমি অনেক আনন্দিত এমন উপহার পেয়ে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা মনে করি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাকারিয়াস দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি কোরআন হলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। যা আল্লার কাছ থেকে নাজিল হয়েছে। আমি চাই এই ধর্মগ্রন্থের প্রতিটি বাণী মানুষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক। মানুষ ভালো ফলাফলের জন্য এগিয়ে আসুক, আল্লাহকে স্মরণ করুক।
আল-কোরআন বিতরণ করার উদ্দেশ্য কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন ইন্টারমেডিয়েটে পড়ি, তখন থেকে টিউশনির মাধ্যমে অনেক কষ্টে টাকা উপার্জন করেছি। আমাদের দেশের মানুষ খেটে খাওয়া। অনেকেরই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কেনার সামর্থ্য নেই। তবে আমি সব সময় বিশ্বাস করি ভালো একটি গ্রন্থ যদি কোনো শিক্ষার্থীর কাছে থাকে, অবশ্যই সে ভালো মানুষই হবে। এ জন্য এই পবিত্র এই গ্রন্থটিকেই বেছে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি রমজানের সময় কোরআন বিতরণ করি। আমাদের বড়দিন হলে খ্রিস্টীয়দের মাঝে বাইবেল বিতরণ করি। হিন্দুধর্মালম্বীদের পূজায় গীতা বিতরণ করারও চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক মানুষ দিনমজুর হিসেবে কাজ কাজ করছেন। তাদের সামর্থ্য হয় না একটা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কেনার। অনেক মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও রয়েছে এমন। নতুন গ্রন্থ পেয়ে তারাও খুশি। এটা আমাকে অত্যন্ত স্পর্শ করে। তাই আমি আমার অনুভূতি থেকে শত কষ্টের মধ্যেও চেষ্টা করি একটা পবিত্র গ্রন্থ বিতরণ করার।
কোরআন বিতরণের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পবিত্র আল কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ। এ গ্রন্থটি যদি একটা মানুষের হাতে তুলে দিতে পারি, একজন খ্রিষ্টান হয়ে আমি বিশ্বাস করি সে মানুষটি ভালো হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি সে মানুষটি একেবারে আলোর পথে চলবে। পাপাচার থেকে মুক্ত থাকবে। কারণ আল্লাহকে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি। তাকে আমরা ভালোবাসি। গ্রন্থটি থাকলে ইসলামের যে আলো, সে আলোর পথেই চলবে।
মাকারিয়াস দাস ১৯৮৪ সালের ১২ এপ্রিল পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ খ্রিস্টানপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রয়াত সিমন দাস ও খ্রিস্টিনা দাস দম্পতির চতুর্থ সন্তান তিনি। শিক্ষাজীবনে স্থানীয় আটোয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে আটোয়ারী বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করেন।
২০১০ সালের ১ জুলাই রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দান করেন। দীর্ঘ এক বছর ট্রেনিং শেষে উপপরিদর্শক পদে তেজগাঁও থানায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি সাভার মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি এমন সামাজিক কাজ করে চলেছেন।
মাহিদুল মাহিদ/এনএ