ভোলায় অশনির প্রভাব, ক্ষতির মুখে কৃষক
‘ধারদেনা কইরা লগ্নি জমিতে ধান চাষ করছি। আল্লাহ দিলে ধানের ফলন ভালো হইছে। এহন ধান কাইটা ঘরে তোলনের পালা হইছে কিন্তু এই দুই দিনের বৃষ্টিতে সব ধান ক্ষেতেই নষ্ট হইয়া যাইতেছে। এহন পথে বওন ছাড়া উপায় নাই। আমি এই দেনার টাকা কেমনে দিমু? নিজের একটা টাকা ক্যাশ নাই। সারের টাকা বাকি, পানির টাকা বাকি, জমির টাকা বাকি। আল্লাহর দিকে চাওন ছাড়া আমার কোনো উপায় নাই।’
এভাবেই অশ্রুচোখে কথাগুলো বলছিলেন ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন তুলাতুলী গ্রামের কৃষক নূরউদ্দিন মেহের।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির টানা বৃষ্টিতে জেলায় বরো ধান, মুগডাল, চিনাবাদাম, মরিচ ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা সদর চরফ্যাশন, তজুমউদ্দিন উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় কৃষি জমির ফসল মাটির সঙ্গে নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
তুলাতুলী গ্রামের কৃষক মো. মঞ্জুর অবস্থা। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি তিন কানি জমিতে সয়াবিন, এক কানি জমিতে বোর ধান চাষ করেছি। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসল ঘরে তুলতে পারি নাই। সব ফসল মাঠে এই বৃষ্টির পানিতে পচতেছে। এই তিন কানি জমির সয়াবিন ও এক কানি জমির বোরো ধান চাষ করতে আমার প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হইছে। সময়মতো ফসল ঘরে তুললে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, চালান ওঠাতেই কষ্ট হয়ে যাবে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মিয়া জাহানপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহিন বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ৪০ শতাংশ জমিতে চিনাবাদাম, মরিচ ও মুগডাল করছি। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এখন চিন্তায় পড়ে গেছি। ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে শুনেছি। ফসলের মাঠে বাদাম, মুগডাল, মরিচ রয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বরো ধান, মুগডাল, চিনাবাদাম, মরিচ ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। এ ক্ষতির কারণে কৃষকের শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের কাজ চলছ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ভোলা জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ৬৫৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৩২৮ হেক্টর ধান কর্তন করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ৪৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমির ধান। মুগডাল আবাদ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। কাটা হয়েছে ৫০ ভাগ। চিনাবাদাম আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে, যা এখনো সম্পূর্ণ মাঠে রয়েছে। আর মরিচ আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে অর্ধেক ফসল কাটা হয়েছে, বাকি ফসল এখনো মাঠে রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়া বজায় ছিল। তবে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে জেলায় কৃষি ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের আমরা সর্বক্ষণ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
ভোলা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সোমবার মধ্য রাত থেকে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাস কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণে রূপ নিয়েছে।
ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ