সাংবাদিক সোহেলকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার
প্রতিদিনের মতো সোহেল রানা (৩৪) সোমবার সকালেও বাড়ি থেকে বের হন শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার জন্য। নিংগইন এলাকায় পৌঁছালে ইউএনওর গাড়ি তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুরে তার মৃত্যু হয়। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাংবাদিকের পরিবার।
সোমবার (০৯ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সোহেল রানার মরদেহ তার বালুয়া বাসুয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। বাবার লাশ থেকে কিছুটা দূরে সিয়াম ও সামিয়া ফুফুর কোলে বসে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। স্বামী হারানোর শোক আর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ঘিরে ধরেছে স্ত্রী জনি আক্তারকে।
জানা যায়, নিহত সাংবাদিক সোহেল রানার বড় ছেলে সিয়াম হোসেন স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করে। ছোট মেয়ে সামিয়া খাতুন প্রাক-প্রাথমিকে পড়ছে।
সোহেল সিংড়ার শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুরন্ত সংবাদ পত্রিকার সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
সোহেল রানার স্ত্রী জনি আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার শ্বশুর আগেই মারা গেছেন। বৃদ্ধ শাশুড়িসহ পাঁচজনের সংসারে সোহেল ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? বাচ্চাদের মানুষ করব কীভাবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
এদিকে নিহতের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিআরটিএর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান এবং সিংড়ার ইউএনও সামিরুল ইসলাম। সোমবার রাত ১০টার দিকে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিংড়া মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু আহমেদ দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের আত্মার মাগফিরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার পাশাপাশি নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। কেন সেখানে সরকারি গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? চালক কে ছিল? সে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল কি না? তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাপস কুমার/এসপি