অশনির প্রভাবে বাগেরহাটজুড়ে বৃষ্টি, বিপাকে ধানচাষিরা
বঙ্গোপসাগরের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় অশনি বৃহস্পতিবার (১২ মে) সুপার সাইক্লোন হয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। অশনির প্রভাবে ইতোমধ্যে বাগেরহাটজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই জেলার সবগুলো উপজেলায় বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টির পরিমাণও। ফলে হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন ধানচাষিরা।
সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের ধানচাষি নাজমুল শেখ বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে অনেক বৃষ্টি ছিল। গত দুই-তিন দিন বৃষ্টি না থাকায় আমরা ধান কেটে মাঠে রেখেছিলাম। বাড়ি আনার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের শেখ রুস্তম আলী বলেন, আল্লাহর রহমতে ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে পেরেছি। কিন্তু খড় নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি। বৃষ্টির পানিতে খড় নষ্ট হলে গরু-বাছুরকে কী খাওয়াব?
শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর সাউথখালী এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, সিডরে আপনজন, ঘর-বাড়ি, জমি-জমা হারিয়েছি। সিডরের পর আইলা, নার্গিস, বুলবুল, আম্পান, ইয়াসসহ একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে মূল্যবান সম্পদও হারিয়েছি। এ বছর নাকি আবার অশনি আঘাত হানবে। এত আঘাত সহ্য করার জায়গা নেই আমাদের।
মোংলার চিলা এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ শেখ বলেন, ঝড়ের পূর্বাভাস যখন থাকে, তখন আকাশে মেঘ দেখলেই আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে। সিডরে ঘর-বাড়ি সব কিছু হারিয়েছি। এখন নদীর পাড়ে কোনো রকম ঘর বানিয়ে থাকি। নতুন করে আবার ঝড় আসছে। ঘর-বাড়ি যদি আবার নদীতে চলে যায়, পরিবার নিয়ে গাছের নিচে থাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করীম বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিপিবি, রেড ক্রিসেন্ট, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবাই প্রস্তুত আছে। বাগেরহাটে বর্তমানে ২ নং সতর্কতা সংকেত চলমান রয়েছে। সংকেত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাটে ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের।
আবহাওয়া পূর্বাভাসের বুলেটিন-৭ এ জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় অশনি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
তানজীম আহমেদ/এসপি