লক্ষ্মীপুরে উপকূলে ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা উপকূলে ভাঙন আতঙ্কও বাড়ছে। অব্যাহত ভাঙনে প্রতিদিনই উপকূলের কেউ না কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন থামেনি। এ আতঙ্কে নদী থেকে একটু দূরের মানুষও এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। নদী থেকে ভেসে আসা বাতাসের শব্দও তাদের কাছে এখন আতঙ্কের।
এদিকে গত বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নে মেঘনা এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়।
এ চার মাসে যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল, তার এক ভাগও সম্পন্ন হয়নি। এর পরিবর্তে এক মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। নদী এলাকায় ঠিকাদারদের প্রতিনিধি ও শ্রমিকদের দেখা না যাওয়ায় স্থানীয়দের দাবি, ঠিকাদাররা ‘পালিয়েছেন’।
অন্যদিকে বর্ষার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করলে কমলনগর-রামগতির বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছে স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১১ এপ্রিল এ উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত শত শত অসহায় মানুষ মানববন্ধন করে দ্রুত নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেনাবাহিনী দিয়ে নদীতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের দাবি থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ রেখে পালিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীভাঙন অব্যাহত ছিল। সামনে বর্ষা। নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে ভাঙনে কমলনগর দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
সরেজমিন উপজেলার সাহেবেরহাট হাট, কালকিনি, ফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো কাজ চলছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলকনের লুধুয়া চৌধুরী বাড়িটি যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। লুধুয়া বাজারটি যতই পেছনে আনা হচ্ছে, মেঘনা ইচ্ছেমতো ততই গিলে নিচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক গফুর মিয়া জানিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি চারবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এখন তিনি নিঃস্ব। অন্যের আশ্রয় ছাড়া এখন আর তার কোনো উপায় নেই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গেল জুন মাসে ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন হয়। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৪ প্যাকেজে ১৫ জন ঠিকাদার টেন্ডারে কাজ পান। এর মধ্যে ১৩ জন ঠিকাদারই কাজ শুরু করেন। বালু সংকটের কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শুনেছি বালু পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রেখেছেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চালু ছিল। চাঁদপুর থেকে বালু এনে ডাম্পিং কাজ করা হতো। সেখান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় ঠিকাদাররা সামায়িকভাবে কাজ বন্ধ রেখেছে। আমরা নতুন মাধ্যম খুঁজছি। বালু পাওয়ামাত্রই কাজ শুরু হবে।
এনএ