বাবার আকুতি উপেক্ষা করে তাসপিয়াকে গুলি করে শুটার রিমন
ইট ছুড়ে মারার ফলে তাসপিয়া মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আবু জাহের ও তার কোলে থাকা তাসপিয়াকে গুলি করে। আবু জাহের অনেক আকুতি জানিয়েছেলেন, কিন্তু তা শোনেনি শুটার রিমন।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে বেগমগঞ্জ র্যাব-১১-এর সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বার থানার চরক্লার্ক এলাকা থেকে তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি রিমনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে রিমন, মহিন ও বাদশাসহ ছয়-সাতজন মহিনের বাসার সামনে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিমন হত্যা সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে ২১ হাজার টাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কিনে আনে।
তিনি বলেন, হাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হাজীপুর গ্রামে আবু জাহেরের বাড়িতে বাদশা ও ফিরোজ নামে দুজনের জমি নিয়ে পূর্বশত্রুতা ছিল। এ নিয়ে ১৩ এপ্রিল পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। সামাজিকভাবে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে আবু জাহের সেখানে সত্য কথা বলেন, যা বাদশার বিপক্ষে যায়। পরে বাদশা আবু জাহেরকে হত্যা করার জন্য আসামিদের ভাড়া করে। আসামিরা আবু জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৩ এপ্রিল বিকেলে সন্ত্রাসী রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা আবু জাহের ও তার কোলে থাকা শিশুকন্যা তাসপিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে বাবা-মেয়ে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায় তাসপিয়া।
তাসপিয়া হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা প্রথমে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা। তিনি জানান, ঈদ সামনে রেখে ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরু হলে তারা আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসে। এখানে এসে সুবর্ণচরের চর ক্লার্ক এলাকায় আত্মগোপন করে তারা।
খন্দকার মইন বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার পর চর ক্লার্কে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় রিমন ও তার সহযোগীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে রিমন ও তার সহযোগীরা র্যাবের কাছে অস্ত্র–গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে।
আত্মসমর্পণকারীরা হলো- মো. রিমন ওরফে শুটার রিমন, তার প্রধান সহযোগী ৩ নম্বর আসামি মহিন (২৫), ৪ নম্বর আসামি মো. আকবর (২৫), ৫ নম্বর আসামি মো. সুজন (২৮) ও ১০ নম্বর আসামি নাঈম প্রকাশ ওরফে বড় নাঈম (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, একটি কার্তুজ ও ১১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-১১-এর সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রধান আসামি রিমন পাঁচটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়নাভুক্ত আসামি। আমরা আসামিদের বেগমগঞ্জ মডেল থানায় তাসপিয়া হত্যা মামলায় বুঝিয়ে দেব।
বাকি আসামিদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান খন্দকার মো. শামীম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনের পাশে উপস্থিত ছিলেন নিহত শিশু তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন আমার একটাই চাওয়া, তা হলো খুনিদের ফাঁসি। আমি যেহেতু প্রবাসে থাকি, তাই আমার ও পরিবারের নিরাপত্তা দরকার। এরা ভয়ংকর বাহিনী। এদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়।
হাসিব আল আমিন/এনএ