ছাত্রদল করায় ১৬ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই শ্রাবণের
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে। ছাত্রদল করার কারণে ১৬ বছর ধরে শ্রাবণের পরিবার যোগাযোগ রাখেনি তার সঙ্গে। শ্রাবণও দীর্ঘদিন বাড়িতে যান না। এমনকি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেও অংশ নেন না তিনি।
রোববার (১৭ এপ্রিল) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে শ্রাবণের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে তিনি সিনিয়র সহসভাপতি মনোনীত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজো ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। সেজো ছেলে কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান আহ্বায়ক। অর্থাৎ তারা পুরোটাই আওয়ামী পরিবার।
কিন্তু ছোট ছেলে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ পারিবারিক ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। আজ শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
শ্রাবণের বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত জানান, তিনি শুনেছেন তার ভাই ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছেন। তবে শ্রাবণের সঙ্গে তাদের পরিবারের কারও কোনো সম্পর্ক নেই। ১৬ বছর শ্রাবণ বাড়িতে আসেন না এবং যোগাযোগও নেই।
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও শ্রাবণ ছাত্রকাল থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই। শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে, এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে হয় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রাবণ ছাত্রদল করায় কয়েক বছর আগে তার সঙ্গে পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করার ঘোষণা দেন বাবা রফিকুল ইসলাম।
কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেই থেকে বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ কমে আসে। পরিবারের সবাই অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রদল ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেননি।
এ বিষয়ে এর আগে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ জানিয়েছেন, কেশবপুর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
জাহিদ হাসান/আরআই/জেএস