বিপৎসীমার ওপরে ধনু নদীর পানি, আতঙ্কে কৃষকরা
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি। বিশেষ করে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) ধনু নদীর পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রাত ৯টার দিকে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বর্তমানে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ অতিক্রম করে মূল হাওরে পানি প্রবেশ করার তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখছি না।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধে অবস্থান করছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর শতকরা ৬০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন চাকুয়া গ্রামের কৃষক মৃদুল মিয়া বলেন, প্রথম পর্যায়ে ধনু নদীর পানি বেড়ে আমাদের নিচু এলাকার অনেক বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধেও ফাটল দেখা দেওয়ায় আমরা দিনরাত কাজ করে বাঁধ মেরামত করেছি। এরই মধ্যে ফসল হারানোর ভয়ে আমরা কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছি।
তিনি বলেন, আবারও ধনু নদীর পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় বাঁধ ডিঙিয়ে পানি হাওরে ঢুকে পড়তে পারে। এতে যেসব ধান এখনও কাটার বাকি আছে- সেগুলো পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ১০ উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদ ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী জানান, ৩৩২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ও ১০ হাজারের মতো কৃষি শ্রমিক হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলের শতকরা ৬০ শতাংশ জমির বোরো ধান কর্তন হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্বিতীয় দফায় ধনু নদীসহ হাওরের অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কৃষকদের ৮০ ভাগ পাকা ধান কেটে ফেলার তাগিদ দিয়ে আসছি। আশা করছি দ্রুত কৃষকরা তাদের হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
এর আগে প্রথম দফায় নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার কয়েকটি হাওরের অন্তত ৫০০ হেক্টর নিচু জমির বোরো ধান তলিয়ে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এফএম মোবারক আলী বলেন, তখন ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দেয়। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছিল হাওরের ফসল রক্ষার বিষয়টি। তবে জেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে মিলে বাঁধ মেরামত করে ঝুঁকি মোকাবিলা করে।
জিয়াউর রহমান/আরএআর