পাখি শিকারি ওয়াহেদ এখন ২০০ কবুতরের রক্ষক
ছোটবেলা থেকেই পাখি শিকারে মনোযোগী ছিলেন ওয়াহেদ আলী। আর এ কারণে যুবক বয়সেই বন্দুক কেনেন তিনি। এরপর সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে যেতেন পাখি মারতে। দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতেন এই শখের পেছনে। এক পর্যায়ে পাখি শিকার তার নেশা ও পেশায় পরিণত হয়। শিকারবিহীন খুব কম দিন অতিবাহিত হয়েছে তার জীবনে।
পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন পাখি শিকার করা আইননত দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। শিকারের মাধ্যমে অনেক পাখিকে এতিম করা ও কষ্ট দেওয়া হয়। তখন থেকে পাখি শিকার বাদ দিয়ে কবুতর পালন শুরু করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহেদ এখন অস্ট্রেলিয়া জাতের লাল সিরাজি ও কালো সিরাজি দুই জাতের কবুতর নিয়ে পালন করা শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি খামারে ১০০ জোড়া কবুতর লালন পালন করছেন। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করার স্বপ্নও বুনছেন তিনি। তার খামারে কবুতরের ছয়টি জাত রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় গরু-ছাগল বাণিজ্যিকভাবে করা হলেও কবুতর পালন করা হয় না। তবে কিছু বাড়িতে অল্প করে কবুতর পোষা হয়।
আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, স্কুলে থাকাবস্থা পাখি শিকার করতাম। শখের বসে বন্দুক কিনেছিলাম। পরে পাখি শিকারের আইন জানার পর কবুতরের প্রতি আমার আসক্তি বাড়ে। তখন থেকেই পাখি শিকার বন্ধ করে দেই। তারপর কুমিল্লা থেকে লাল সিরাজি ও কালো সিরাজি নামে অস্ট্রেলিয়া জাতের দুই জোড়া কবুতর নিয়ে আসি। সেগুলো লালন পালন শুরু করি।
তিনি বলেন, আমি কবুতরের আশেপাশে থাকলে তারাও আমার কাছে চলে আসে। একেকজন শরীরের একেক জায়গায় বসে। বর্তমানে আশি জোড়া কবুতর ও বিশ জোড়া বাচ্চা কবুতর আছে। ছয় জাতের কবুতর পালন করছি। দৈনিক ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয় তাদের পেছনে। ইতোমধ্যে কয়েক জোড়া বাজারে বিক্রি করেছি। জোড়া প্রতি দুই হাজার করে টাকা পেয়েছি।
তার খামারে দেখা হয় এক কলেজ শিক্ষার্থীর। তিনি বলেন, আমি কবুতর খামারটি দেখতে এসেছি। নিজেও কবুতর পালন করতে বেশ আগ্রহী। এখানে আসার পর ওয়াহেদ চাচা আমাকে সার্বিক পরামর্শ দিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কবুতর পালন করা শুরু করব ইনশাল্লাহ।
প্রতিবেশী হাসান আলী রুবেল বলেন, তিনি (ওয়াহেদ) কবুতর শখের বসে পালন করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন প্রায় খামারের মতো হয়ে গেছে। আর কবুতরের সঙ্গে উনার আলাদা একটি সখ্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি এখন বাণিজ্যিকভাবে কবুতরের খামার করার চেষ্টা করছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ কবুতর পালন করছে না। তবে পারিবারিকভাবে অনেকে লালন পালন করছেন। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে কবুতরের করার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সরকারি বিধি অনুযায়ী সার্বিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।
এম এ সামাদ/এমএএস