মহিষের মলমূত্রের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মাদরাসাশিক্ষার্থীরা
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার খোশনদী দাখিল মাদরাসার মাঠের এক অংশে মহিষের খোয়াড় গড়ে ওঠায় দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই দুর্গন্ধে বহুদিন ধরেই শ্রেণিকক্ষে অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের তাজ মিয়ার বাজারে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসাটি। নদীভাঙনের শিকার হয়ে দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড দেওয়ানপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ২০১০ সালে ওই গ্রামের একাধিক দাতার জমিতে মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হলেও ২০২০ সালে মাদরাসার নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ হয়।
ওই ভবনের সামনের ৮ শতাংশ জমির মালিক স্থানীয় মো. নুরুল হক। তিনি এই জমিতেই ৮ থেকে ১০টি মহিষ দিয়ে গড়ে তুলেছেন মহিষের খামার। প্রতিদিন এসব মহিষের মলমূত্র ও আবর্জনার পচা দুর্গন্ধ ছড়ায় চারপাশে। এতে মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আশপাশের বসতি মানুষজনও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এমন পরিবেশের কারণে প্রতিষ্ঠানে এ বছর কোনো নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী অন্যত্র চলেও গেছে। এ বিষয়ে মহিষের মালিককে মাঠ থেকে মহিষ অপসারণের জন্য একাধিকবার বলার পরও স্থানান্তর না করায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার স্টাফরা জানান, মাদরাসার সামনে মাঠের এক অংশ জমি মাদরাসার জন্য কিনতে চাইলেও জমির মালিক নুরুল হক জমি বিক্রি করেননি বরং সেখানে মহিষের খোয়াড় তৈরি করেন তিনি। তাকে বাধা দিলে তিনি আমলেই নেননি। করোনাকালীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে কেউ বাধা দেয়নি। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর নতুন ভবনে ক্লাস হস্তান্তর হলে তাকে মহিষের খোয়াড় অপসারণের জন্য একাধিকবার কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়। এতে তিনি প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরে অন্যত্র জমি কিনে দেওয়ার শর্ত দেন।
মাদরাসার শিক্ষার্থী মো. শামিম, রুবেল, সোহাগসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মাদরাসার ক্লাস চলাকালে মহিষের মলমূত্রের গন্ধে ক্লাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এখন রমজানের সময় ক্লাসে এলে দুর্গন্ধে বমি আসে। মাদরাসার শিক্ষকদের বললেও তারা কোনো সমাধান করছেন না।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রতিদিন মহিষের মলমূত্রের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ছেলে-মেয়েরা। এখানে ক্লাস করাই দুষ্কর। অনেক ছেলে-মেয়ের অসুস্থ হয়ে হাঁপানি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারা দুর্গন্ধের কারণে মাদরাসায় যেতে চাইছে না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া এখন সময়ের দাবি।
স্থানীয়রা মো. মালেক মিয়া বলেন, মহিষের খোঁয়াড়ের দূষিত বর্জ্যে প্রতিনিয়ত রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। মহিষের মালিককে মহিষের খোঁয়াড় অপসারণ বা নিয়মিত আঙিনা পরিষ্কার করার কথা বলা হলেও তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ প্রায় সময় শ্রমিক দিয়ে এসব গোবর ও মলমূত্র পরিষ্কার করছে।
খোশনদী দাখিল মাদরাসা সুপার মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, মাদরাসার মাঠে মহিষ পালনের কারণে প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমির মালিককে বারবার খোঁয়াড় সরানোর জন্য বললেও তিনি তা শুনছেন না। অন্যত্র জমি কিনে দেওয়ার দায়সারা শর্ত দিয়ে আসছেন তিনি। এভাবে চলতে থাকলে মাদরাসা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে মহিষের মালিক মো. নুরুল হকের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিয়ম বেগম জানান, মাদরাসা প্রাঙ্গণে মহিষ পালন বিষয়টি জানা ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি এমন কোনো কিছুই থাকতে পারবে না। যা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ