নেত্রকোনায় ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল, স্বেচ্ছায় কাজ করছেন কৃষকরা
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওর ও নদ-নদীর পানি বাড়ছে। খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের হাজার হাজার একর বোরো জমি।তাই তারা বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছায় দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কৃষি বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি বিভাগসহ জনপ্রতিনিধিরা।
তবে কৃষকরা স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, যখন বাঁধে সমস্যা দেখা দেয়, তখন তড়িঘড়ি করে বাঁধ মেরামত করা হয়। এর আগে কারও খবর থাকে না। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নানা রকম অনিয়মেরও অভিযোগ করেন কৃষকরা।
স্থানীয় চাকুয়া গ্রামের কৃষক মৃদুল মিয়া বলেন, যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করার কথা সেভাবে কাজ হয়নি। এখন ফসল ঘরে তোলার সময়। পানি বাড়ছে আবার বাঁধে ফাটলও দেখা দিয়েছে। কিন্তু পিআইসির কোনো লোকজনকে আমরা পাচ্ছি না। তাই আমাদের ফসল রক্ষা করতে রাতের ঘুম হারাম করে খেয়ে না খেয়ে দিনরাত কাজ করছি। তবুও শেষ রক্ষা হবে কি না বলতে পারছি না।
এদিকে পানি বাড়তে দেখে ফসল হারানোর ভয়ে হাওরের আধা পাকা-কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন অনেক কৃষক।কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন হাওরের জমির কাঁচা ধান কেটে নেওয়া কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের খোরাক চলে। কিন্তু বাঁধের যে অবস্থা, যেকোনো সময় ভেঙে ফসল পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তাই ভয়ে কাঁচা অবস্থাতেই ধান কেটে ফেলছি। সব হারানোর চেয়ে অল্প কিছু ধানও যদি পাই, তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও প্রাণে বাঁচব।
এদিকে উপজেলার ধনু নদ সংলগ্ন চুনাই হাওরসহ কয়েকটি হাওরের নিম্নাঞ্চলের ১১৩ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলার তলার হাওরের ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র হাওরাঞ্চলে বোরোর আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি।
তিনি আরও বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধনু নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার ১৩৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে ১১৩ হেক্টর ও মদনে ১০ হেক্টর বোরো জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল রক্ষাসহ তাদের মঙ্গলার্থে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এল এম সৈকত বলেন,কীর্তনখোলা বাঁধে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই আমরা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে চেষ্টা করছি তাদের সোনালি ফসল রক্ষা করতে।
বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ধনু নদের পানি প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে এখনও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। হাওরের নিম্নাঞ্চলের কিছু জমি পানিতে নিমজ্জিত হলেও মূল হাওর এখনও পর্যন্ত অক্ষত আছে।
জিয়াউর রহমান/এসপি