সেতু নির্মাণের খোঁজ নেই, সড়কে খাল কেটে পালিয়েছেন ঠিকাদার
ব্যস্ততম পাকা সড়কের জরাজীর্ণ সেতু ভেঙে নির্মাণ করা হবে নতুন পিএসসি গার্ডার সেতু। কিন্তু সেতুর বদলে সড়কে বড় খাল কাটা হয়েছে। সেই খালের মাটি দিয়ে জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে পালিয়েছেন ঠিকাদার। সেখানে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজারো যানবাহন।
সেতুটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাধীন লালন বাজার-পান্টি বাজার সড়কের ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজারের ডাকুয়া নদীর ওপর অবস্থিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের খোঁজ নেই। অথচ সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করে খাল কেটেছে। খালের মাটি দিয়ে কোনো মতো বিকল্প কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে পালিয়েছেন ঠিকাদার। এখন জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ডাকুয়া নদীর দুই পাড় ঘেষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। উপজেলার দ্বিতীয় শহর বলা হয় পান্টিকে। উপজেলার চাঁদপুর, বাগুলাট, পান্টি ও যদুবয়রা ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার একাংশের মানুষ এই সড়ক হয়ে কুষ্টিয়া শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য সড়ক কেটে পালিয়েছেন ঠিকাদার। যোগাযোগ রক্ষার জন্য কাটা সড়কের মাটি দিয়ে জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে। তবে সেখানে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর প্রায় ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতুর অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি করার দায়িত্ব পায় কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনীর ডন-রুমানা (জেডি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট কাজ শুরু হয়ে শেষ করার কথা রয়েছে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর। গত ১৬ মার্চ ঠিকাদার ফারুক আহমেদ সেতু নির্মাণের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেতু ভাঙা হয়েছে বা সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তা জানেন না উপজেলা প্রকৌশলী।
সরেজমিনে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতু থেকে পাকা সড়কটি কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নদীর ভেতরে একটা বিকল্প মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। ঠিকাদার, শ্রমিক ও প্রকৌশলী কার্যালয়ের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে মানুষ ও যানবাহন।
এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রহমত আলী বলেন, ডাকুয়া নদীর কোলঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। বাজারের জন্য সেতুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেতু নির্মাণের কথা বলে সড়ক কেটেছে ঠিকাদার। কিন্তু কাজের কোনো খোঁজ নেই।
পান্টি বাজারের ব্যবসায়ী আজম খান বলেন, চলাচলের জন্য যে রাস্তা করেছেন ঠিকাদার, তা দিয়ে এখনই চলাচল করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলে তো চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
সেতুর সঙ্গে চা বিক্রেতা মোতালেব আলীর দোকান। তিনি বলেন, শুক্রবারে সাপ্তাহিক হাট পান্টি। হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে সেতু দিয়ে। কিন্তু ঠিকাদার সড়ক কেটে কাজ না করে পালিয়েছেন। এখন মানুষের দুর্ভোগ দেখার লোক নেই।
পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, পান্টি একটি ঐতিহ্যবাহী ও পুরাতন বাজার। বাজারের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণাধীন সেতুর কাজ জনগণের চরম ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আমরা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চাই।
এ বিষয়ে ঠিকাদার ফারুক আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সেতু ভাঙা বা সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আমার জানা নেই। সেতু দ্রুত নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
রাজু আহমেদ/আরএআর