ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে সয়াবিন তেল, ভাজা হচ্ছে পরোটা
বাড়ির পাশের বাজারে ছোট একটি দোকান আব্দুল হামিদের। এই দোকানের আয় দিয়ে চলে পুরো পরিবার। সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ সব খরচ করতে হয় দোকানের আয় দিয়ে। সন্তানরা দোকানে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। মুদি সামগ্রীর পাশাপাশি দোকানে চা ও পরোটা বিক্রি করেন আব্দুল হামিদ। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পরোটা খাওয়ার জন্য তার দোকানে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ।
এদিকে বেড়েই চলছে সয়াবিন তেলের দাম। একদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে তেল বাজারে পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এই অবস্থা দেখে কয়েক দিন পরোটা বিক্রি বন্ধ রাখেন আব্দুল হামিদ। ফলে দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি কমতে থাকে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরে স্যালাইনের মতো ফোঁটায় ফোঁটায় তেল ফেলে পরোটা ভাজা শুরু করেন তিনি। এই অভিনব কায়দায় পরোটা ভাজা দেখতে এখন তার দোকানে সাধারণ মানুষ ভিড় জমাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মুথরাপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ। মুথরাপুর বাজারে নিজ দোকানে অভিনব পদ্ধতিতে স্যালাইনের মত ফোঁটায় ফোঁটায় পড়া তেলে পরোটা ভেজে আলোচনায় এসেছেন তিনি। ক্রেতা বাড়ার পাশাপাশি পদ্ধতিটি দেখার জন্য তার দোকানে ভিড় করছেন অনেকেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোকান ভর্তি মানুষ। কেউ পরোটা খাচ্ছেন কেউ আবার পরোটা ভাজা দেখছেন। সবার চোখ দোকানের মাথার ওপর থেকে কড়াই পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে। চুলার ওপর একটি বাঁশে সয়াবিনের তেল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে স্যালাইনের পাইপ বেয়ে পড়ছে তেল। দু-একটা ফোঁটা করে তেল কড়াইয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
দোকানের মালিক আব্দুল হামিদ জানান, তেলের দাম বাড়ার কারণে খুব চিন্তা করছিলাম। গ্রামের দোকান কীভাবে কুলিয়ে উঠব। পরে রুহুল নামে একজন কাস্টমার আমাকে এ বুদ্ধি দেন। এখন গ্রামের প্রতিটি বাড়ির লোক এটি দেখতে আসছে। পরোটাও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
আব্দুল হালিমের স্ত্রী বলেন, আমরা যে পদ্ধতিতে পরোটা ভাজছি তা দেখতে গ্রামের অনেক মহিলা আমাদের দোকানে আসছেন। অনেক ভিড় হচ্ছে আগের তুলনায়। আমরা এভাবে আর কতদিন চলব। পরোটা ভাজা না হয় এভাবে হচ্ছে। কিন্তু বাকি সব কিছুতে তো বেশি বেশি তেল লাগছে। বিকেলে তো আবার পুরি ভাজার সময় বেশি তেল লাগছে। এখন পুরি তেমন ভাজছিনা। আমরা তেল নিয়ে খুব বিপাকে পড়েছি।
পরোটা খেতে আসা রেদোয়ান আহমেদ বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসায় আর পরোটা রান্না হয় না। রুহুল ভাইয়ের এমন আবিষ্কার সমাজের জন্য কতটা স্বস্তির তা উপলব্ধি করছি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, একদম সৃজনশীল একটি চিন্তা। সয়াবিনের উচ্চ দামের দিনে এমন চিন্তা প্রশংসনীয়। আমি আমার বাড়িতেও এমন পদ্ধতি চালু করেছি। বিষয়টি মজার হলেও সয়াবিন নিয়ে হতাশার দিনেও হাসিমুখে পরোটা ভাজছি।
স্থানীয় শিক্ষক শাহিন বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ চলতে পারছে না। তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে মানুষের দম আটকে গেছে। আব্দুল হামিদ একটা স্বস্তির বুদ্ধি এনেছে। তবে এটা সমাধান নয়। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজার মনিটরিং করতে হবে, অসাধু ব্যবসায়ী ঠেকাতে হবে। আরও তেল আমদানি করতে হবে সরকারকে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছেন। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কেউ সয়াবিন তেল বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সবাইকে তেলের অপচয় রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এম এ সামাদ/আরএআর